ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

যমুনার চরে থমকে থাকা জীবন-জীবিকা

বেলাল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
যমুনার চরে থমকে থাকা জীবন-জীবিকা ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সারিয়াকান্দি থেকে ফিরে: যমুনার বুক প্রায় পানিশূন্য। সেখানে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর।

ডুবোচরও আছে অনেক। এসব বালুচর ও ডুবোচরের ফাঁদে রয়েছে উপজেলার আঁকাবাঁকা অসংখ্য পানিপথ। পথগুলোতে কোথাও ছিপছিপে, কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমর পানির দেখা মেলে।
 
এভাবে প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণে যমুনার নৌপথগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। যার ফলে নৌ-পথে যাতায়াতকারী মানুষ-জনের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই।  

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে ও স্থানীয় মানুষ-জনের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।

এ নদী পথে উপজেলার কালিতলা ঘাট থেকে চরাঞ্চলে যাওয়ার নৌপথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা নৌপথ ব্যবহার করে সরাসরি যমুনা সার কারখানা থেকে কালিতলা ঘাটে ইউরিয়া সার আনতে পারছেন না। কালিতলা গ্রোয়েন ও দীঘলকান্দি হার্ড পয়েন্টের উজান ও ভাটিতে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে যমুনার বুকে অসংখ্য বালুচর ও ডুবোচর জেগে ওঠায় হাসনাপাড়া-দিঘাপাড়া, কাজলা-বেনিপুর, চকরতিনাথ-কর্ণিবাড়ী নয়াপাড়া খেয়াঘাট বন্ধ রয়েছে। আরও ১২টি নৌপথ বন্ধ হবার উপক্রম। এসব নৌপথ বন্ধ হওয়ায় উপজেলার ৭৫টির মতো চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ, ইসলামপুরের গুটাইল, শিমুলতাইড়, চালুয়াবাড়ী, মানিকদাইড়, ডাকাতমারা, পাকুরিয়া, শোনপচা, টেংড়াকড়া, জামথল, বহুলাডাঙ্গা ঘাটের উদ্দেশে যাচ্ছিলো ১১টি নৌকা। এছাড়া বিভিন্ন ঘাট থেকে পাঁচটি নৌকা আসছিলো সারিয়াকান্দি কালিতলা ঘাটের দিকে। যাত্রীবোঝাই কয়েকটি নৌকা ডুবোচরে আটকা পড়ায় মালপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

এসব এলাকায় নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরে আসা-যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী। অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন বিকল্প পথে কষ্ট করে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। কেউ সাইকেলে, কেউবা কাঁধে বাঁশের তৈর বাঙের (স্থানীয় ভাষায়) দু’প্রান্তে মালপত্র ঝুলিয়ে যমুনার বুকে জেগে ওঠা বালুচর মারিয়ে হেঁটে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। এদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রয়েছেন।
 
সারিয়াকান্দি বাজারের সার ব্যবসায়ী আলহাজ সামছুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, এককালে প্রমত্তা যমুনা দিয়ে ভারতের কলকাতা হয়ে আসাম রাজ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নৌপথ চালু ছিলো। সেটি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এক যুগ আগেও অভ্যন্তরীণ নৌপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিলো। সে সময় তুলনামূলক স্বল্পব্যয়ে নিয়মিত পণ্যবোঝাই জাহাজ চলাচল করতো। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পলি বালিতে যমুনার গভীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে যমুনা আগের সেই নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন কার্গো-জাহাজ চলাচল তো দূরের কথা, পণ্যবোঝাই নৌকা পারাপার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত মথুরা পাড়া ঘাটে সারবোঝাই নৌকা নোঙর করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী ভোজন কুমার পোদ্দার জানান, নৌপথ বন্ধ হওয়ার আগে বাজারের দুই হাটবার দিনে প্রায় লাখ টাকার মালামাল বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে হাটের দিন ২০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি হওয়াই কঠিন।

যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে উৎপাদিত ফসল ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারছেন না জানিয়ে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চরদলিকার কৃষক শামছুল আলম বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে চরাঞ্চলের কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
 
নান্দিনার চরের কৃষক আনিছার রহমান খোকা জানান, প্রায় শত বিঘা জমিতে মরিচসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু এবার এসব পণ্য কোথায় বিক্রি করবেন তার কূল-কিনারা করতে পারছেন না।
 
কাজলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল দূর-দূরান্তের হাটে নিয়ে যেতে পারছেন না। এতে করে তারা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
 
কালিতলা ঘাটের ইজারাদার সাইদুজ্জামান বলেন, নৌপথ শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাপারিরা মালামাল বোঝাই নৌকা ঘাটে নোঙর করতে পারছেন না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার মধ্যে পড়ে না। সে কারণে আমরা কোনো ভূমিকা নিতে পারছি না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এমবিএইচ/টিআই/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।