ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কলসি কাঁখে মেলায় যাবে ‘কুমার বাড়ির বউ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
কলসি কাঁখে মেলায় যাবে ‘কুমার বাড়ির বউ’ কলসি কাঁখে মেলায় যাবে ‘কুমার বাড়ির বউ’-ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: বছর ঘুরে আবারও আসছে পহেলা বৈশাখ। নতুন বাংলা বছরকে বরণ করতে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। বৈশাখকে সামনে রেখে ব্যস্ত কুমার পাড়াও। সেখানে চলছে বউ সাজানোর কাজ। কুমার বাড়ির ‘বউ’ এবার মেলায় যাবে কলসি কাঁখে। সেইসঙ্গে যাবে হাতি-ঘোড়া, হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসনও। বৈশাখী মেলায় যেতে জোরে-শোরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ এলাকায় কুমার পাড়া। এখানকার আট-দশটি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

বৈশাখকে সামনে রেখে কুমার পাড়ায় মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুদের নানা ধরনের খেলনা। খেলনার মধ্যে রয়েছে- ষাঁড়, ঘোড়া, হরিণ, খরগোশ, হাতি, পাখি, ঘর, নৌকা, মাছ ও ব্যাংকসহ নানা শো-পিস।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন প্রতিবছর লক্ষ্মীপুর কালিবাড়ি, সামাদ মাঠ ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়ে বসবেন মৃৎশিল্পীরা। রঙ-বেরঙের মাটির খেলনা শিশুদের অন্যতম আকর্ষণ।

পাড়ায় ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে ঘিরে মৃৎশিল্প কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েগুণ। দিন-রাত এখন তাদের ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। নারী-পুরুষ সবাই সমান তালে ব্যস্ত। উঠানজুড়ে খেলনা রোদে শুক‍াতে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলছে রঙের কাজ, তুলির শেষ আঁচড়। বানানো শেষ হলে মৃৎশিল্পীরা প‍ূজা সারবেন। এরপর মেলায় যাবে খেলনা সামগ্রী। কলসি কাঁখে মেলায় যাবে ‘কুমার বাড়ির বউ’-ছবি: বাংলানিউজমৃৎশিল্পীরা জানান, শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় তারা মৃৎশিল্পের কাজ করছেন। তবে এখন প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারে মাটির জিনিসপত্রের কদর কমে গেছে। ঈদ আর মেলাকে ঘিরে তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। কিন্তু বছরের বাকি সময় প্রায় অলস সময় কাটাতে হয়।

মৃৎশিল্পী বিউটি পাল বলেন, এসব তৈরিতে উপযোগী মাটি কিনে আনতে হয়। এরপর মাটি প্রস্তুত করে তৈরি করতে হয় খেলনা। রোদে শুকানোর পর রঙ দিয়ে সাজাতে হয়। তারপর মেলায় বিক্রির জন্য নেওয়া হয়। ৩০ টাকা শুরু করে থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় এসব খেলনা।

শিমা পালের ঘর ও আঙিনা জুড়ে মাটির খেলনা। ঘরে বসে রঙ-তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মেলায় বিক্রির জন্য ফাল্গুন ও চৈত্র মাস ধরে এসব খেলনা তৈরি করেছি। কলসি কাঁখে মেলায় যাবে ‘কুমার বাড়ির বউ’-ছবি: বাংলানিউজকুমার পাড়ার দীপক পাল বলেন, ঈদ আর মেলা এলেই আমাদের ব্যস্ততা বাড়ে। এখন মাটির জিনিসপত্রের কদর কমে গেছে। এজন্য দামও আর পাওয়া যায় না। কদর না থাকায় অনেকেই অন্য পেশা ধরেছেন। আমি বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে যেতে চাইলেও পারি না। আমার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা শেখাচ্ছি। তাদের এ পেশায় জড়াবো না।

পাড়ার কলেজ পড়‍ুয়া ছাত্র সজিব পাল বাংলানিউজকে বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারে মৃৎশিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। চাহিদা কম, প‍ুঁজির অভাব- এসব কারণে দিন দিন এ পেশার লোকজন অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এবং মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রফতানি করা গেলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪  ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
আরআর/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।