ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বেগুনি পাতার ধানের নাম ‘বঙ্গবন্ধ‍ু’

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৮
বেগুনি পাতার ধানের নাম ‘বঙ্গবন্ধ‍ু’ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামে কৃষক মনজুর ধান ক্ষেত/ছবি: ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু

কুমিল্লা: চারিদিকে দৃষ্টিনন্দন সবুজ ধানের সমারোহ। হঠাৎ চোখ আটকিয়ে গেল চার শতাংশ জমির দিকে। যেখানে চাষ করা ধান গাছের পাতার রঙ বেগুনি। কিন্তু ধানের শীষগুলো স্বাভাবিক ধানের মতোই সবুজ। প্রথম দেখাতে মনে হবে, ধান গাছগুলো কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে পাতার রঙ বেগুনি হয়ে গেছে। কিন্তু ধান ক্ষেতের চাষির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল এ ধানের প্রকৃত রহস্য।

বেগুনি ধান চাষ করেছেন কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামের কৃষক মনজুর হোসেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বেগুনি ধানগাছ সম্পর্কে তথ্য দিতে রাজি হন।

কিভাবে এমন ধানের সন্ধান পেলেন জানতে চাইলে কৃষক মনজুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালে সুন্দরবনে প্র্রথম এ ধানের সন্ধান পেয়ে একশ গ্রাম ধান সংগ্রহ করি। এরপর চলতি বছর তা চাষ করেছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামে উপগ্রহ আছে, সেতু আছে। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আমাদের কৃষি প্রধান দেশে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো ধান নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ধানটির নাম রেখেছি ‘কুমিল্লা বেগুনি পাতা বঙ্গবন্ধু ধান’।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামে কৃষক মনজুর ধান ক্ষেত/ছবি: ইমতিয়াজ আহমেদ জিতুধানটি সম্পর্কে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ধানটিতে অ্যান্থোসায়ানিনের(এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ) উপস্থিতির কারণে পাতার রঙ বেগুনি হয়েছে। অনেক সময় গাছ পরিবেশগত চাপে পড়লে অ্যান্থোসায়ানিন তৈরি করে। ধানের শীষগুলো স্বাভাবিক ধানের মতোই সবুজ। তাই এ ধানের পুষ্টিগুণ অন্যান্য স্বাভাবিক ধানের মতোই হওয়ার কথা।

বেগুনি পাতার এ ধানটি সম্পর্কে আরো জানতে যোগাযোগ করা হয় কুমিল্লা জেলার ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমারা ধানটি দেখেছি। ধানে এ পর্যন্ত কোনো রোগ বা পোকা আক্রমণ করেনি। ধানটিতে ফুল এসেছে। ধানটির বৈশিষ্ট্য ভালোভাবে বুঝতে এর ফলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কৃষক মনজুর বলেন, আমাদের গবেষণার কেন্দ্র নেই। কৃত্রিম আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই। গবেষণার জন্য সূর্য ও চাদের আলোই আমাদের ভরসা।

কৃষি পেশায় আসার কারণ জানতে চাইলে কৃষক মনজুর হোসেন বলেন, ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাবিভাগে ভর্তি হওয়ার পরপরই বাবা মারা যান। এরপর গ্রামে চলে আসি। তারপর থেকে কৃষি কাজ করে নিজেকে কৃষক হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য করি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।