ঢাকা: ফ্রান্সে চলছে উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) আর সমানতালে চলছে দর্শক হাঙ্গামা। এবারের ইউরো কাপ যেন পূর্বের সব রেকর্ডকে হার মানাচ্ছে।
ইংল্যান্ড-রাশিয়ার ম্যাচে দুই দলের সমর্থকদের দাঙ্গার ঘটনা ফুরাতে না ফুরাতেই গ্রুপ ‘ডি’র ম্যাচে ফের দর্শক হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। সাঁতে ইচেনায় ক্রোয়েশিয়া আর চেক রিপাবলিকের মধ্যকার ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ান সমর্থকরা মাঠে আগুনের গোলা ছুঁড়ে মারে।
ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে ইভান পেরিসিকের গোলে লিড নেয় ক্রোয়েশিয়া। তার দেওয়া একমাত্র গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় দলটি। বিরতির পর আরেক ইভানের গোলে ব্যবধান দ্বিগুন করে ক্রোয়েশিয়ানরা। বার্সেলোনার তারকা ফুটবলার ইভান রেকিটিচের ৫৯ মিনিটের মাথায় দেওয়া গোলে ২-০তে লিড নেয় লুকা মদ্রিচ, মারিও মান্দজুকিচদের দলটি।
খেলার ৭৬ মিনিটের মাথায় একটি গোল পরিশোধ করে রিপাবলিকানরা। চেকদের হয়ে প্রথম গোলটি করেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামা মিলান জোদা (২-১)। নির্ধারিত সময়ের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে (ম্যাচের ৯২ মিনিট) আরেক বদলি খেলোয়াড় টমাস নেসিদ পেনাল্টির সুযোগ থেকে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়ান (২-২)।
নিশ্চিত জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ক্রোয়েশিয়ানরা দেখেছে তাদের সমর্থকদের কাণ্ডকারখানা। ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে মাঠে দর্শকরা কয়েকটি আগুনের ফ্লেয়ার ছুঁড়লে ম্যাচের দায়িত্বে থাকা রেফারি মার্ক ক্লাটেনবার্গ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ রাখেন। এ সময়ে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়রাও তাদের সমর্থকদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।
এদিকে, ক্রোয়েশিয়ার কোচ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবী করে জানান, জড়িতরা কোনো ক্রোয়েশিয়ান সমর্থক হতে পারেন না। তারা স্পোর্টস টেরোরিস্ট (সন্ত্রাসবাদী)। আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এই ঘটনা আমাদের বেশ মর্মাহতও করেছে। তারা আমাদের সমর্থক হতে পারেনা। তারা রাস্তার গুণ্ডাবাহিনী। আমি নিজ চোখে দেখেছি, যারা মাঠে আগুনের গোলা ছুঁড়ছিল তাদের ৯৫ শতাংশ দর্শক অন্যদের দেখেই এমনটা করেছে। ইউরো কাপের আয়োজন নষ্ট করতে আর স্পোর্টসের মধ্যে সন্ত্রাস ঢুকিয়ে দিতেই তারা এমনটি করেছে। তারা সত্যিকার অর্থে ক্রোয়েশিয়ানদের ভালবাসে না।
এর আগে চলতি আসরে ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। স্টেডিয়াম থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। ফ্রান্সের মার্শেইতে ২০১৬ ইউরোয় নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড ও রাশিয়া। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ইংলিশ সমর্থকদের ওপর চড়াও হন বেশ কয়েকজন রাশিয়ান সমর্থক। নিরাপত্তা বাধা ডিঙিয়ে ইংলিশ সমর্থকদের মারধর করেন রাশিয়ান দর্শকরা। গত শনিবারের (১১ জুন) সেই সহিংসতায় অন্তত ৩৫ জন আহত হন।
এরপরও থামেনি দর্শক হাঙ্গামা। সবশেষ লিল শহরের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন শতাধিক ইংলিশ ও রাশিয়ান উগ্র সমর্থক। এতে অন্তত পঞ্চাশজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৩৬ জনকে আটক করার পাশাপাশি ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লিলের ফ্লান্ড্রেস রেল স্টেশনের কাছে শতাধিক ইংলিশ সমর্থক রাশিয়া বিরোধী গান গেয়ে দাঙ্গা শুরু করেন। পরে বিপুল সংখ্যক ফ্রেঞ্চ দাঙ্গা পুলিশ এসে টিয়ার গ্যাস, পিপার স্প্রে ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।
এদিকে, ইংল্যান্ড-রাশিয়ার পর বিতর্কের জন্ম দেয় জার্মানরা। জার্মানির সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্যারিসে ব্রাজিলের দুই সাংবাদিকের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ ও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
ইংল্যান্ড-রাশিয়া ম্যাচে গ্যালারিতে রাশিয়ান দর্শকদের বিশৃঙ্খলার দায়ে কঠোর অবস্থানে উয়েফা। ইতোমধ্যেই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তিনটি অভিযোগে তদন্ত করা হচ্ছে-গ্যালারিতে বিশৃঙ্ক্ষলা, বর্ণবাদী আচরণ ও আতশবাজি পোড়ানো।
প্রসঙ্গত, ২০১২ ইউরো আসরেও রাশিয়ান দর্শকরা গ্যালারিতে বিশৃঙ্ক্ষল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। আর ২০১৮ বিশ্বকাপ আসর হবে রাশিয়ার মাটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, ১৮ জুন ২০১৬
এমআরপি