ঢাকা: আরও একবার চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হলো মেসি বাহিনীকে। পর পর তিন বছরে তিনবার ফাইনালের মঞ্চে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হার, ২০১৫’র কোপা আমেরিকার ফাইনালে স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হার আর কোপার শতবর্ষী আসরে আমেরিকার মাটিতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে সেই চিলির কাছে আবারো টাইব্রেকারে হার সঙ্গী আকাশী-নীল জার্সিধারীদের।
২৩ বছর ধরে শিরোপা না জেতা আর্জেন্টিনার প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হবে এমন প্রত্যাশায় ছিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। তবে, গত বছরের ইতিহাস আবার ফিরে এলো কোপার শতবর্ষী আসরের ফাইনালে। আর্জেন্টিনাকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আবারো চ্যাম্পিয়ন চিলি।
নিজেদের ইতিহাস বদলাতে না পেরে ম্যাচ শেষে মাঠের মধ্যে হতাশ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন ডি মারিয়া, হিগুয়েন, আগুয়েরো, মাশচেরানোরা। আর মেসি তখন একা বসে রিজার্ভ বেঞ্চের এক কোণায়। ফুটবলের এই খুদে জাদুকরকে টানা তৃতীয়বার দেশের জার্সি গায়ে হতাশা লুকাতে হলো।
টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষায় দলের হয়ে প্রথম পেনাল্টি নিতে এসেছিলেন মেসি। গোলবারের উপর দিয়ে বল বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে গোলের সুযোগ মিস করেন বার্সেলোনার প্রাণভোমরা। যে মেসি সেমিফাইনালে ২৫গজ দূর থেকে সরাসরি ফ্রি-কিকে স্বপ্নের মতো গোল করেছিলেন, সেই মেসিকেই দেশের জার্সি গায়ে শেষ শটটিতে গোলবঞ্চিত থাকতে হয়।
ফুটবলের রাজপুত্র খ্যাত মেসির আত্মবিশ্বাস সেখানেই ঠুনকো কাঁচের মতো ভেঙে যায়।
চোটের জন্য ফাইনালের মঞ্চে আর্জেন্টিনা পায়নি লাভেজ্জিকে। চোট সেরে ফেরা ডি মারিয়ায় যেন নিজেকে খুঁজে ফেরেন। দ্বিতীয়ার্ধে তাকে তুলে নিয়ে আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্ডো মার্টিনো মাঠে নামান মাতিয়াসকে। সেমিফাইনালের জোড়া গোলদাতা হিগুয়েনকে তুলে মাঠে নামান সার্জিও আগুয়েরোকে।
কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ৮৪ মিনিটের মাথায় স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৮২ হাজারের বেশি দর্শককে অবাক করে দেন ইংলিশ প্রিমিয়ারের সেরা স্ট্রাইকার আগুয়েরো। ম্যানসিটির আর্জেন্টাইন এই তারকা চিলির ডি-বক্সে বল পেয়ে যে শটটি নেন সেটি গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। আগুয়েরোর সামনে শুধুই বার্সেলোনার চিলিয়ান গোলরক্ষক ব্রাভো ছিলেন।
১৯৯৩ সালে সবশেষ কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর আর কোনো বড় প্রতিযোগিতায় শিরোপা হাতে ফিরতে পারেনি তারা। এর মাঝে বিশ্ব ফুটবলের বর্তমান এক নম্বর দলটি সাতটি ফাইনাল খেলেছে। প্রতিবারই খালি হাতে ফিরেছে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা।
চারটি কোপা আমেরিকা, দুইটি ফিফা কনফেডারেশন কাপ আর একটি বিশ্বকাপের ফাইনালের কোনোটিতেই জিততে না পেরে বারবার শিরোপাবঞ্চিত থাকতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। ২৩ বছরের মেজর কোনো শিরোপা খরা থেকেই গেল ফুটবলের সব সময়ের ফেভারিট দলটির কাছে। টানা তিন বছর তিনটি ফাইনাল খেলেও আবারো খালি হাতেই ফিরল বাতিস্তুতা, ওর্তেগা, হার্নান ক্রেসপো, মেসির দেশটিকে।
মেসির বিদায়ের এই ধাক্কা সামলে আলবিসেলেস্তেরা আবার কবে মেজর কোনো শিরোপা জিততে পারবে, সেই আশায় ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে থাকবে কোটি কোটি হতবাক দৃষ্টি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ২৭ জুন ২০১৬
এমআরপি