পেলে-দিয়েগো ম্যারোডোনা-জিনেদিন জিদান-ডেভিড ব্যাকহাম-পাওলো মালদিনি-রোনালদো-রোনালদিনহোদের পর যেমন ফুটবলকে এখন রাঙিয়ে দিচ্ছেন মেসি-রোনালদো-নেইমার-ইডেন হ্যাজার্ডরা। তেমনি নতুন ওঠে আসছেন আনসু ফাতি-রদ্রিগোদের মতো তারকারাও।
মেসি-রোনালদো যেমন পূর্বসূরীদের রেকর্ড একের পর এক ভেঙে দিচ্ছেন তেমনি তাদের উত্তরসূরী কেউ এসে হয়তো সেসব রেকর্ডে ভাগ বসাবেন। সমর্থকরা সেই নতুন তারকাকে ঘিরে স্বপ্ন বুনবে, উল্লাসে গলা ফাটাবে গ্যালারিতে বসে।
তেমনই এক নতুন তারকা ফুটবলকে রাঙাতে এসেছিলেন ১৬ বছর আগে। ১৬ বছর পরও যিনি এখনও নিজ আভায় দ্যুতিমান। শিল্পী যেমন তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে রঙ ছড়িয়ে আঁকেন একেকটা মাস্টারপিস তেমনি তিনিও বাঁ-পায়ের জাদুতে ফুটবলকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য নান্দনিক জগতে। গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড।
রেকর্ডের সেই বরপুত্র আর কেউ নন, মেসি। আর্জেন্টিনা-বার্সেলোনা তথা ফুটবল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের আদর্শ। ১৬ বছর আগে-পরে কেবল বয়সটাই পার্থক্য। কিন্তু সেই ধার-গোলের ক্ষুধা এখনো কমেনি। বরং বেড়েছে।
১৬ নভেম্বর ২০০৩ সালে প্রথম বার্সেলোনার মূল দলের জার্সিতে মেসিকে দেখেছিল ফুটবল বিশ্ব। এস্তাদিও দো দ্রাগাওতে হোসে মরিনহোর পোর্তোর বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের বার্সেলোনা। সেই ম্যাচে ডাচ কোচ পরীক্ষার জন্য সুযোগ দিয়েছিলেন লা মাসিয়াসহ কাতালানদের টিনেজ তারকাদের।
অবশ্য বার্সার প্রতিযোগিতামূলক মূল দলে মেসির অভিষেকে সময় লেগেছে আরো ১ বছর। ১৬ অক্টোবর ২০০৪, ১৭ বছর বয়সী এক বালক ১৪ নাম্বার জার্সি গায়ে দৌড়াচ্ছেন রোনালদিনহো-জাভি-ইনিয়েস্তাদের সঙ্গে। সেই থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি মেসিকে। হয়ে ওঠেছেন ক্যাম্প ন্যুয়ের সবচেয়ে বড় তারকা।
ইতোমধ্যে ১৬ বছর আগের সেই বালক পা রেখেছেন ৩২ বছর বয়সে। গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে অবসর নেওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু যতোই বুড়ো হচ্ছেন ততোই যেন দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে ওঠছে মেসির পা। গত শুক্রবার রাতেও তার প্রমাণ দিয়েছেন এলএমটেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলের জয় এনে দিয়েছেন তিনি।
অভিষেকের পর বার্সেলোনায় অনেক কোচের অধীনে খেলেছেন মেসি। কেউ তার প্রশংসা না করে থাকতে পারেননি। লুইস এনরিকে তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমরা এক অসামন্য প্রতিভা সম্পর্কে কথা বলছি। ’
‘সম্ভবত আমি যাদের দেখেছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা সে (মেসি)। আমার নাতি-নাতনীদের বলবো যে, আমি তাকে কোচিং করিয়েছি। ’ এমনটাই বলেছিলেন পেপ গার্দিওলা।
সতীর্থ না হলেও মেসির প্রশংসা করতে পিছপা হোননি সাবেক চেলসি মিডফিল্ডার ও বর্তমান ব্লুজদের কোচ ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, ‘আমি ম্যারাডোনাকে দেখে বড় হয়েছি। তিনি ছিলেন আমার প্রিয় খেলোয়াড়, কিন্তু মেসি প্রতি বছর সেরা। ’
তেমনি কখনো শিষ্য হিসেবে না পেলেও মেসির প্রশংসা করেছেন আর্সেনালাদের কিংবদন্তি কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার, ‘মেসি প্লে-স্টেশন খেলোয়াড়। ’
অভিষেকের পর থেকে সব রেকর্ড ভেঙেছেন মেসি। ক্লাবের জার্সিতে জিতেছেন ১০টি লা লিগা, ৬টি কোপা দেল রে, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ৩টি ইউরোপীয়ান সুপার লিগ, ৮টি সুপারকোপা দে এস্পানা।
ব্যক্তিগত অর্জনে আছে পাঁচ ব্যালন ডি’অর এবং ছয়বার করে জিতেছেন গোল্ডেন বুট ও পিচিচি ট্রফি। কেবল দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপটা অধরা রয়ে গেছে মেসির।
বয়স গড়িয়ে এখন বত্রিশে মেসি। এখনও ফুটবলকে শাসন করে যাচ্ছেন নিজের পায়ের অসামান্য জাদুতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
ইউবি