ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

অমর্ত্য ইস্যুতে মোদিকে খোলা চিঠি দিচ্ছেন বিশিষ্টরা, বৃহস্পতিবার বৈঠক

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
অমর্ত্য ইস্যুতে মোদিকে খোলা চিঠি দিচ্ছেন বিশিষ্টরা, বৃহস্পতিবার বৈঠক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। পুরনো ছবি

কলকাতা: বিশ্বভারতী ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব যেন কিছুতেই মেটার নয়। অবশ্য এই দ্বন্দের মধ্যে অমর্ত্যর বাড়িতে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তবুও যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না।  

বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্যের কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্নমহলে প্রশ্ন উঠলেও, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তার হুঁশিয়ারি, অমর্ত্য সেনকে বাড়তি জমি ছাড়তেই হবে।

তবে ৯০ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদকে নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাজকর্মকে ভালো চোখে দেখছে না বাংলার বুদ্ধিজীবীরা। অমর্ত্যর পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিশিষ্টজনরাও। বিশ্বভারতীর আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন বাংলার বুদ্ধিজীবীরা। নোবেলজয়ীকে যাতে আর অপমান না করা হয়, চিঠিতে সেই  আবেদন জানানো হয়েছে।

জমি বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিশিষ্টদের আবেদন, প্রধানমন্ত্রী যেন অমর্ত্য সেনকে লাগাতার অপমানের ইস্যুতে নীরবতা ভাঙেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিশিষ্টদের বক্তব্য, অমর্ত্য সেন যে জায়গাটিতে বসবাস করছেন, সেটি তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এখন বিশ্বভারতী তাঁকে পৈতৃক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে। এই ধরনের পদক্ষেপ গোটা দুনিয়ার কাছে বাঙালি ও দেশবাসীর মাথ নত হচ্ছে।

বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠিতে সই রয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, লেখক ভগীরথ মিশ্র, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কবি মন্দাক্রাতা সেন এবং অশোক মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।  

সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী এবং অচিন চক্রবর্তীর মতো বিশিষ্টরা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, অধ্যাপক সেনকে এই ধরনের নোটিশ দেওয়া লজ্জাজনক। এই ধরনের প্রচেষ্টাকে ধিক্কার জানানো উচিত।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) জানা গেছে, নোবেলজয়ীর পাশে দাঁড়াতে বাংলার বিদ্বজ্জনেরা বৃহস্পতিবার(২৭ এপ্রিল) কলকাতার নন্দনে একটি বৈঠক করতে পারেন। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে জমি বিতর্কে নিজেদের মতামত জানাবেন বিশিষ্টরা। আগামীকাল স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় নন্দনের ৩ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে ওই বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। তবে গতকাল(২৫ এপ্রিল) এই নিয়ে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।  

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাজ্যের পুরুলিয়া জেলায় এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি বলেছেন, অমর্ত্য সেনকে যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে তা কোনো বাঙালি সহ্য করবে না।

পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, অমর্ত্য সেন একজন বাঙালি, শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মানুষ। তাঁর চিন্তাভাবনা বিজেপির বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। তাই তাঁকে নানাভাবে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা তো হবেই। বিশ্বভারতী যেভাবে ওঁনার জমি কাড়তে তৎপর হয়ে উঠেছে তা জেনেও, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চুপ থাকে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান পদক্ষেপ নেয় না। এমনকি কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার স্বয়ং বীরভূম জেলার সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও তিনিও কার্যত নীরব। রাজ্যের বিজেপি নেতারাও বিষয়টিকে বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।  


শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, বাঙালি-শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবী, এমন মানুষদের বিজেপি গ্রহণ করতে পারে না। বহিরাগত কোনও শক্তি তাদের এজেন্ট মারফত অমর্ত্য সেনকে হেনস্থা করবে, আর তা বাঙালি সহ্য করবে- এটা হতে পারে না।

উল্লেখ্য, অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর জমি সংক্রান্ত বিবাদ মূলত, ১৩ শতক জমি নিয়ে। বিশ্বভারতীর দাবি, ওই জমি বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। তাঁকে আগামী ৬ মে’র মধ্যে সেই জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে অমর্ত্য সেন বিদেশ থেকে চিঠি মারফত জানিয়েছেন, সেই জমি তাঁর পৈতৃকভাবে পাওয়া। তাই ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।  

এদিকে, জমি বিতর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিশিষ্টদের লেখা চিঠির সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। তার অভিমত, অমর্ত্য সেন নিয়ম ভেঙে জমি দখল করে রেখেছেন।

জবাবে পবিত্র সরকারের অভিমত, অমর্ত্য সেন কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতির যে দর্শন সেটাকে পছন্দ করেন না। হিন্দুত্ববাদীর এই বাড়াবাড়ি তিনি পছন্দ করেন না। সনাতন ধর্ম বলবো না। একটা ব্রাহ্মণ্যবাদী দর্শন যেখানে নারীরা ব্রাত্য, আদিবাসীরা ব্রাত্য, দলিতরা (ছোট সম্প্রদায়) ব্রাত্য- বর্তমান সরকারের এরকম একটা সামাজিক শ্রেণীবিভেদ বা জাতিভেদের দর্শনে বিশ্বাসী। এটাকে বরাবর অমর্ত্য সেন সমালোচনা করেছেন। যে কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই এর সমালোচনা করবে। তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়তো গোসা হয়েছে, সেই রাগ বিশ্বভারতীর উপাচার্যের উপর বর্তেছে! তিনি হয়তো অদৃশ্য কোনো নির্দেশে অর্মত্যকে এইভাবে অপমান করেছেন।


অমর্ত্য সেনের বাড়তি ১৩ ডেসিমিল (শতক) জায়গা দখলের বিষয়ে পবিত্র সরকার বলেছেন, এই ১৩ ডেসিমেল জায়গা কি একটা বিশাল মাঠের মতো ভূখণ্ড? যাতে বিশ্বভারতী বিকল্প কিছু করতে পারত? একটা হাসপাতাল বা কলেজ অথবা জায়গাটায় স্কুল বানানো যেত। ১৩ ডেসিমিল সামান্য জায়গা। সেটা অমর্ত্য সেনের মতো ব্যক্তিত্বের কথা ভেবেই বিশ্বভারতীর উপেক্ষা করলে কি এসে যেত? কি এমন ক্ষতি হতো?

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
ভিএস/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।