কলকাতা: বুথফেরত জরিপ (এক্সিট পোল) নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি এই এক্সিট পোল বিশ্বাস করি না। এই এক্সিটপোল বিজেপির তৈরি করা।
শনিবার (০১ জুন) শেষ হয়েছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ৪ জুন ভোটের ফলাফল। তার আগেই গত সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বুথফেরত জরিপ। প্রতিটা সমীক্ষা জানান দিচ্ছে, কেন্দ্রের নিরিখে এগিয়ে রেখেছে বিজেপি। এমনকি, বাংলায় চরমভাবে ধস নামতে চলেছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের। পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনে সিংহভাগ বিজেপির ঝুলিতেই যাবে বলে প্রথমসারির সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধারণা দিয়েছে।
যা নিয়ে দেশজুড়ে চাপা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর সেই সন্ধিক্ষণে রোববার (২ জুন) বাংলা একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যারা মোদিজিকে জিতিয়ে দিচ্ছেন, তাদের বলছি, এত সহজ অঙ্কে পার পাওয়া যাবে না। এই সরকার কতদিন চলবে, সন্দেহ আছে। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা ভোট, ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা ভোটের এক্সিট পোল দেখেছি। কোনোটাই মেলাতে পারিনি, কারণ এগুলো সব বিজেপির তৈরি। মিডিয়াকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই মাস আগেই এই এক্সিট পোলগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ওসব বিজেপির কোম্পানি। অভিষেক আজ সাংবাদিক বৈঠক করবে। নিশ্চয়ই এই বিষয়ে কথা বলবে।
সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, বিজেপি কিছু লোক পোষে। সবাই বলে, মিডিয়া থেকে ‘ই’ টা বাদ দিয়ে ‘ও’ লিখে দাও। তহলেই ‘মিডিয়া’ বদলে তখন ‘মোডিয়া’ হয়ে যাবে। আমি অন্য রাজ্যের বিষয়ে বলতে পারব না, কারণ আমার অন্য রাজ্য নিয়ে ধারণা নেই। তবে অখিলেশরা (উত্তরপ্রদেশ) ভালো করবে, তেজস্বীরা (বিহার) ভালো করবে, স্ট্যালিনরা (তাড়িমলনাড়ু) ভালো করবে। উদ্ধবরা (মহারাষ্ট্র) ভালো করবে। যেখানে যেখানে আঞ্চলিক দল রয়েছে, তারা ভালো ফল করবে। যেই-ই আসুক না কেন, খুব বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসবে না।
কংগ্রেস নেতৃত্বাদ্ধীন ২৭ দলের ইন্ডিয়া জোটের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে মমতা বলেছেন, আমি এরকম কোনো কথা বলতে পারি না। অন্য রাজ্যের তথ্য নেই আমার কাছে, কিন্তু নিজের রাজ্যের কথা বলতে পারি। যেভাবে আমরা গরমের মধ্যে কাজ করেছি। তা আমরা জানি। ওরা প্রতিটা আসনগুলো নিয়ে পর্যন্ত বলছে, যে এই সিটে হারছে, ওই সিটে হারছে। তার মানে কি বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। না হলে জানলো কী করে কে কোন সিটে কে জিতছে, কে হারছে!
তিনি বলেন, ভোটটা যদি মেশিনেই (ইভিএম) হয়, ভোটটা যদি গোপনেই হয়, তবে ওরা জানল কী করে? আমরা জানবার আগে, কাউন্টিং হওয়ার আগে মিডিয়া কী করে বলছে, কোন সিটে কে জিতবে, কে হারবে। আমি এই মিডিয়ার ক্যালকুলেশন মানি না। আমি আমাদের কর্মীদের বলব, শক্তিশালী থাকতে, ভালো করে কাউন্টিং করতে। যা আসন দেখিয়েছে মিডিয়া, তার ডবল আসনে যদি জিততে না পারি, তখন দেখবেন। প্রত্যেকটা সিট আমরা জিতব।
বাংলায় কেমন ফল হবে? এমন প্রশ্নে মমতা বলেছেন, আমি কোনো নম্বরে যাব না। আমরা যেভাবে মাঠেঘাটে কাজ করেছি, আমি মানুষের চোখ দেখেছি, তাতে আমার কখনও মনে হয়নি মানুষ আমাদের ভোট দেবে না। বিজেপি অনেক শয়তানি করেছে। সিবিআই-ইনকাম ট্যাক্স রেইড, সিএএ, ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল, চাকরি খেয়ে নেওয়া, টাকা বন্টন করা। এমনকি, কংগ্রেসের এলাকাতে মুসলিম দেখে দেখে টাকা দিয়েছে। আমার মনে হয় না, মুসলিমরা ওদের ভোট দেবে। কংগ্রেস ওদের টাকা দিয়েছে, যাতে কংগ্রেসকে ভোটটা দেয়, তৃণমূলের ভোটটা কাটা যায়। সিপিএমও একই কাজ করেছে। আমরা একসঙ্গে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছি। এইজন্য বলছি, আমাদের রাজ্য নিয়ে যা দেখিয়েছে, তা আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না। এটা পুরোটা ফেক। এরা সব বিজেপির দালাল।
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ? তাহলে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে ভোট পরবর্তী আলোচনায় কি এই ইস্যু অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সর্বভারতীয় স্তরে কোনো অন্তরায় তৈরি হবে না। যদি সিপিআইএম নাক না গলায়। আমার একটাই খারাপ লাগে, ইন্ডিয়া জোটে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু সিপিআইএম এদের সম্পূর্ণ মনিটরিং করছে। সিপিআইএম কেন মুখপাত্র হবে? আমার এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রত্যেকটা আঞ্চলিক দলের সম্মান রয়েছে। জোট মানে সবাইকে নিয়ে চলা। কাউকে বাদ দিয়ে নয়। কাউকে গায়ের জোরে বাদ দেওয়া তা হয় না।
যদি ইন্ডিয়া জোটের সরকার তৈরির মতো পরিস্থিতি হয়, তবে কি তৃণমূল সেই সরকারের অংশ হবে? জবাবে নেত্রী বলেছেন, হ্যাঁ আমরা যাব। আলোচনা করব আমরা। আমি অর্বাচীন উত্তর দিতে রাজি নই। আমি আগে রেজাল্ট দেখব, তারপর বিবেচনা করব। আমাদেরও একটা অঙ্ক রয়েছে। আরও আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে আনার চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রথমসারির সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে বিজেপি এগিয়ে। ‘নিউজ নেশন’ জানাচ্ছে বিজেপি পেতে পারে ৩৪২ থেকে ৩৭৮ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১৫৩ থেকে ১৬৯ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ২১ থেকে ২৩ টি আসন।
‘ম্যাটরিজ’ এর মতো প্রতিষ্ঠান বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৫৩ থেকে ৩৯২ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১৪১ থেকে ১৬১ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ১০ থেকে ২০টি আসন।
‘জন কি বাত’ সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৬২ থেকে ৩৬৮ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১১৮ থেকে ১৩৩ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ৪৩ থেকে ৪৮ টি আসন।
‘সি - ভোটর’ সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৫৩ থেকে ৩৮৩ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৮২ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ৪ থেকে ১২টি আসন।
‘অ্যাকসিস মাই ইন্ডিয়া’ সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৬১ থেকে ৪০১ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১৩১ থেকে ১৬৬ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ৪ থেকে ২০টি আসন।
‘টু’ডেস চাণক্য’ সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৮৫ থেকে ৪১৫ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ৯৬ থেকে ১১৮ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ৪ থেকে ১২টি আসন।
‘সিএন এক্স’ সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৭১ থেকে ৪০১ আসন। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১০৯ থেকে ১৩৯ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ২৮ থেকে ৩৮ টি আসন।
সব মিলিয়ে ১৩ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রে বিজেপিকে এগিয়ে রেখেছে। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট শনিবার দাবি করেছে, ইন্ডিয়া জোট অন্তত ২৯৫টি আসনে জয়ী হতে চলেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যাই বলা হোক না কেন, তা নিয়ে বিচলিত বা গুরুত্ব না দিয়ে গণনার দিন মাটি কামড়ে থাকুন। গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই থামবে না। প্রসঙ্গত, দেশটির ৫৪৩ আসনে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ