ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

ভারত

পানিবণ্টন নিয়ে সরগরম ভারতের কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
পানিবণ্টন নিয়ে সরগরম ভারতের কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতা: ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার (২৪ জুন) রাজ্যের প্রসাশনিক ভবন থেকে পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে সরাসরি প্রতিবাদ করেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান মমতা।

সংবাদ সম্মেলন করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এরপরও যদি তারা না শোনে এবং একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাংলাজুড়ে আন্দোলন চলবে। এমনকি আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়বে ভারতজুড়ে।

এরপর গত রাতেই ভারতের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সবটাই জানিয়েছে রাজ্য সরকারকে। সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল পশ্চিমবাংলার সঙ্গে। তারা সবটাই জানে, এখন মিথ্যা দাবি করছে মমতা সরকার।

কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনাতে মমতার সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছিল। তারা সবটাই জানতো। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মিথ্যা দাবি ছড়িয়েছে।

এরপরই এ নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ জুন) জবাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্য উপদেষ্টা বলেছেন, পানিবণ্টন ইস্যু নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নীতিনির্ধারক ও নীতি নির্ণায়ক স্তরের সঙ্গে ভারত সরকারের নীতি নির্ণায়ক ও নীতি নির্ধারক স্তরে কোনো যোগাযোগ হয়নি।

নবান্ন থেকে সংবাদ সম্মেলনে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এর আগেও চিঠির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বারবার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়েছেন যে, ভারত বাংলাদেশ পানিবণ্টন বহু শত বছরের ইতিহাস ও ভূপ্রকৃতির মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত একটি বিষয়। এর উপরে নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি মানুষের পানি পাওয়া, গঙ্গার ভাঙ্গনজনিত সমস্যা, কৃষি কাজ, শিল্প, সেচ, খাবার পানি সহ একাধিক বিষয় রয়েছে।

এরপরই ভারতীয় সংস্থার উদ্দেশে তিনি বলেন, যে চিঠির বিষয়ে ভারত সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তা হলো ২০২৩ সালের ২৪ জুলাইয়ে বিষয়। ভারতের কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রণালয় একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করেছিল। তাতে পরবর্তীতে মোট ১২ জন সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। যারমধ্যে একজন পশ্চিমবঙ্গের সরকারের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আছেন। এরপর চলতি বছরের ১৪ জুলাইয়ের একটি চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে টেকনিক্যাল কমিটি ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনকে তাদের রিপোর্ট দেয়। যেটা ভারতের কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রণালয় জমা পড়ে।

ওরা (কেন্দ্রীয় সরকার) বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তার মত দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বা জয়েন্ট সেক্রেটারির কাছে দু-একটি ছোট টেকনিক্যাল ইনপুট ছাড়া কিছু চাওয়া হয়নি তার কাছ থেকে।

আলাপন আরও জানান, অনলাইন বৈঠকে এবং পরে ইমেইল মারফত আমাদের দুই-একটি ছোট টেকনিক্যাল ইনপুট ছাড়া এই রিপোর্টে আর কিছু প্রতিফলিত হয়নি। তবে এই রিপোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাময়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনের কোন প্রয়াস করে না। এই রিপোর্টে কয়েকজন প্রকৌশলী তাদের কিছু টেকনিক্যাল মত দিয়েছিলেন। তাতে তিস্তা, পুনর্ভবা, আত্রেয়ী সহ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ ও মধ্যবঙ্গের মধ্যদিয়ে যেসব নদী পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে যায় তার উল্লেখ মাত্র নেই।

মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে গঙ্গা ও তিস্তার পানিবণ্টন, গঙ্গার ভাঙ্গন সহ যতগুলি ইস্যু আছে তার প্রতিফলন এই টেকনিক্যাল রিপোর্টে নেই। তা থাকার কথাও নয় বলেও উল্লেখ করেছেন আলাপন।

তিনি বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রণালয় এই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর সেই মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কোনো চিঠি দেয়নি, এ বিষয়ে কোন যোগাযোগকারী টিম পাঠায়নি বা কোনো আলোচনা করেনি।

আলাপন আরও বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন সম্পর্কিত এবং রাজ্যের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, সংস্থানের সাথে যুক্ত নদী ক্ষয়, নদী ভাঙ্গনজনিত যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, টেকনিক্যাল রিপোর্টে সেসব উল্লেখ নেই। তাছাড়া এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কোন বিষয়ে জানায়নি।

সবশেশে তিনি বলেন বাংলাদেশ পানি বন্টন ইস্যু ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নীতিনির্ধারক ও নীতি নির্ণায়ক স্তরের সাথে ভারত সরকারের নীতি নির্ণায়ক ও নীতি নির্ধারক স্তরে কোনো কমিউনিকেশন কিছু নেই। যে কারণে তাদের কাছেও বিষয়টা স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৫ ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।