ইসরায়েলের কারাগার থেকে ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে গাজায় জিম্মি থাকা চার ইসরায়েলি নারী সেনাকে মুক্তি দেয় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় চলা সংঘাত বন্ধে গত রোববার থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে শনিবার ইসরায়েল ও হামাস তাদের মুক্তি দেয়। খবর আল জাজিরার।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) এদিন নিশ্চিত করেছে, তারা ১২৮ ফিলিস্তিনি বন্দিকে গাজা ও পশ্চিম তীরে স্থানান্তর করে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাকি বন্দিদের মুক্তি এবং স্থানান্তরের দায়িত্ব পালন করে।
গাজা সিটির ফিলিস্তিন চত্বরে চার ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আগে হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা মাস্ক পরে সমবেত হন। সেখানে ফিলিস্তিনি জনতার ভিড়ও ছিল।
হামাসের মুক্তি দেওয়ার চার ইসরায়েলি নারী সেনা হলেন, কারিনা আরিয়েভ, দানিয়েলা গিলবোয়া, নামা লেভি ও লিরি আলবাগ। তারা একটি মঞ্চে উঠে হাসেন এবং উপস্থিতদের উদ্দেশে হাত নাড়েন।
পরে তাদের আইসিআরসির গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি তাদের ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে নিয়ে যায়। মুক্তির আগে আইসিআরসি ও হামাসের যোদ্ধারা কিছু নথিতে সই করেন।
কিছুক্ষণ পরই অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ওফার সামরিক কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাসগুলোকে রওনা দিতে দেখা যায়। ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, হামাসের দেওয়া তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মোট ২০০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
উভয়পক্ষের বন্দিমুক্তি দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে ফিলিস্তিনি জনতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস এবং তেল আবিবে ইসরায়েলিদের উল্লাসমুখর উদযাপনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
যে ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাননি
আরবেল ইয়েহুদ নামে ২৯ বছর বয়সী ইসরায়েলি এক বেসামরিক নারী শনিবার মুক্তি পাবেন, এমনটা মনে করা হয়েছিল। তবে ইসরায়েল বলছে, তিনি মুক্তি পাননি।
তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার সময়ে নির ওজ নামক একটি বসতিতে নিজ বাড়ি থেকে তার ছেলে বন্ধুসহ জিম্মি হন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, এটি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন। এদিকে হামাসের এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, ইয়েহুদা জীবিত রয়েছেন। আগামী শনিবার তিনি মুক্তি পাবেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যতক্ষণ না বিষয়টি সমাধান হয়, গাজায় ফিলিস্তিনিরা উত্তরাঞ্চলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না।
যুদ্ধের সময় গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অনেকেই রোববার থেকে ফেরার আশা করছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল দক্ষিণে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিয়ে আরও মানবিক সহায়তা এবং বাণিজ্যিক সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবির থেকে জানান, অনেক ফিলিস্তিনি শনিবারের বন্দি বিনিময়ের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন, কেননা এটি তাদের উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।
সূত্রের বরাতে খোদারি বলছিলেন, অনেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রোববার উত্তর দিকে ফিরতে পারবেন- এমন আশা নিয়ে এরইমধ্যে ওয়াদি গাজা এলাকার কাছে জড়ো হয়েছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বন্দি বিনিময় হলো। প্রথম দফায় হামাস তিনি বেসামরিক ইসরায়েলি নারীকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েল ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করে।
ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিরা
শনিবার ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত ২০০ বন্দির মধ্যে ১২১ জনই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। বাকিদেরও দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড ছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক বন্দির বয়স ৬৯ বছর, আর সবচেয়ে কমবয়সী বন্দির বয়স ১৫ বছর।
মুক্ত প্রায় ৭০ জনকে ফিলিস্তিনে থাকতে দেওয়া হবে না। ইসরায়েলিদের হত্যার অপরাধে অভিযুক্তদের প্রথমে মিশর পাঠানো হবে। পরে সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে পাঠানো হবে। সম্ভবত তুরস্ক, বা আলজেরিয়া। ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের কারাগারে বন্দিদের বীর ও মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্বোধন করে।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিসের সহকারী অধ্যাপক তামার কারমাউট আল জাজিরাকে বলেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি তাদের পরিবারের জন্য বড় স্বস্তি, যদিও বন্দিদের মুক্তি ইসরায়েলি দখলদারত্বের ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যেই হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই বন্দিদের আরও বড় কোনো চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া উচিত ছিল, যা সংঘাত শেষ করবে, শান্তি নিয়ে আসবে আলোচনা মাধ্যমে, দখলদারত্ব শেষ করার মাধ্যমে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, আমরা যখন কথা বলছি, তখনো দখল অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে, আরও ভূমি দখল করছে, গ্রাম এবং শহরগুলোকে ঘিরে ফেলছে। এরপরও হামাসের মনোযোগ যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং লোকজনকে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার ওপরই রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
আরএইচ