প্রতি বছর টানা এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলিমরা ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেন। এবারও রোজা পালন হয়েছে।
ঈদে সাধারণত তিন দিনের একটা ছুটি থাকে। আর এই ছুটির সময় পরিবারের সবাই মিলে ঘোরাঘুরি ও মজাদার খাবার খেতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার পুরো বিশ্বের প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মুসলিমরা সিয়ামে যেমন ঘরে ইবাদত করেছেন, তেমনি ঈদের আনন্দ হয়তো ভিডিও কলে সমাপ্ত করবেন।
তুরস্ক, ইরাক ও জর্ডানসহ কয়েকটি দেশে ঈদের ছুটির ওপর কারফিউ জারি করা হয়েছে। যদিও কয়েকটি জায়গায় লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, তবে এই মহামারির রেশ দীর্ঘদিনের হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবেও বাজে প্রভাব পড়েছে। ফলে সেভাবে আর উদযান করা হচ্ছে না।
মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা মক্কা ও মদিনার দেশ সৌদি আরব। তবে ইসলামের শ্রেষ্ঠ এই জায়গাতেও পুরোপুরি লকডাউর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেখানে দেশবাসীর প্রতি সরকারের নির্দেশনায় বলা আছে শুধুমাত্র খাবার ও ওষুধ কেনার জন্যই বাইরে যেতে পারবে।
ফিলিস্তিনের শহর জেরুজালেমে অবৈধভাবে খুঁটি গাড়া ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, তারা আল-আকসা মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ দমন করেছে। এছাড়া সেই বিক্ষোভ থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যেখানে সেখানকার মুসলিম কর্তৃপক্ষ গত মার্চের মাঝামাঝি সময়েই মসজিদটিতে ইবাদত করা বন্ধ করে দিয়েছে ও ঈদের পরেও আপাতত শুরু করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে কয়েকজন মুসলিম মসজিতে ঢুকতে গিয়ে ইসরায়েল পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে।
আল-আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান এবং সাধারণত এখানে ঈদের সময় কয়েক হাজার মুসলিম নামাজের জন্য আসে। এই মসজিদের পাশে যে পাহাড় রয়েছে সেখানের চূড়ায় ইহুদিদের পবিত্রতম স্থানও, তারা এটিকে পর্বত মন্দির হিসাবে জানে। আর দীর্ঘ দিন থেকেই এই অঞ্চলটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মাঝে সংঘর্ষের কেন্দ্র হিসেবে লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে করোনার সবচেয়ে বড় ঘাটি হিসেবে চিহ্নিত ইরান ঈদের নামাজের জন্য কয়েকটি মসজিদে ছোট আকারে নামাজের ব্যবস্থা করেছে। তবে দেশটির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজধানী তেহরানসহ অনান্য জায়গায় বড় আকারে কোনো জমায়েত করা যাবে না। যেখানে ইরানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। আর মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজারের বেশি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাণকেন্দ্র দুবাইতে এই ঈদের সময়েও পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড ও চেকপয়েন্ট দিয়ে রেখেছে। মূলত বিদেশি শ্রমিকদের জন্য শিল্পাঞ্চলগুলোর দিকেই এই পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। যদিও আমিরাত তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করছে, তবে পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও খাপারের দিকেই যাচ্ছে। ধনকুবের দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা ২৪৪।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশ হিসেবে খ্যাত ইন্দোনেশিয়ায় করোনা ভাইরাসের কারণে ১৩৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ফলে এবারের ঈদে দেশটির মসজিদ বা খোলা মাঠে কোনো নামাজা হবে না বলে জানানো হয়। ঈদ আনন্দে পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎও করা যাবে না।
অর্থনীতিতে চাঙ্গা মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া তাদের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গত সপ্তাহে খুলে দিয়েছে। যদিও বড় আকারে জনসমাগমের ওপর এখনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র রোববার (ঈদের দিন) প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, আর জনসমাগমে ২০ জনের অধীক যেন না হয় সে ব্যাপারে জানানো হয়। মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে, তবে ৩০ জনের বেশি নামাজ পড়তে পারবে না।
এদিকে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান পুরো বিশ্বের সঙ্গে একই দিন ঈদ পালন করছে। গত মার্চ থেকেই দেশটিতে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মসজিদ বন্ধ করার ব্যাপারে সায় দেননি। যদিও দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১১শ’র মতো মানুষ করোনায় মারা গেছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্থানের তালেবান যোদ্ধারা ঈদের কারণে তিন দিনের যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এমএমএস