ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণ

দেড় মাসেই কেন পদত্যাগে বাধ্য হলেন লিজ ট্রাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
দেড় মাসেই কেন পদত্যাগে বাধ্য হলেন লিজ ট্রাস

আয়রন লেডি খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের মতো কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। কিন্তু নিজে যে বিপদে পড়বেন, তা হয়ত আঁচ করতে পারেনি।

যার খড়্গ এখনও গলায় ঝুলছে তার। এ অবস্থায় করলেন পদত্যাগ। মাত্র ৪৫ দিন ক্ষমতায় থেকে ইংরেজ মসনদ থেকে বিদায় নিলেন কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা।

অথচ দুদিন আগেও পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে লিজ বলেছিলেন, তিনি যোদ্ধা। শেষ হয়ে যেতে আসেননি। ২০ তারিখ কথার পরিবর্তন হয় তার। প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবেন না, তাই পদত্যাগ করছেন বলে জানান।

লিজের এ পদত্যাগ ব্রিটিশ ইতিহাসের একটি অনন্য সাক্ষী। কারণ, ২০০ বছর আগেও একজন কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। তার নাম জর্জ ক্যানিং। ১৯২৭ সালে মাত্র ১১৯ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ব্রিটেন সময় দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কার্যালয়ের সামনে নিজের পদত্যাগ ঘোষণা করেন লিজ ট্রাস। তার এ সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। আসুন জেনে নিই কী কারণে দল ও নিজের ভরাডুবির কারণ হলেন লিজ ট্রাস।

লিজ ট্রাসের সময়ের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের (৫০ বিলিয়ন ডলার) কর ছাড়ের প্যাকেজ ঘোষণা। যা চার দশকের মধ্যে তীব্র মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও কোনো প্রকার বিশ্লেষণ ছাড়াই ব্যক্ত করেন তিনি। যদিও এর কোনো বিকল্প অর্থায়নের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরা হয়নি। এতে অর্থসংস্থান করতে সরকারকে হাজার হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ নিতে হতো। ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দর পড়ে যায়, তার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া- এসব যুক্ত হয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির সংকট মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এক গুরুতর হয়ে ওঠে।

লিজের অনুদানবিহীন বিশাল কর ছাড়ের সিদ্ধান্তে পাউন্ড ও ব্রিটিশ বন্ড খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দাম সর্বকালের সর্বনিম্নে ঠেলে দেয় এবং আসন্ন সংকটের আশঙ্কায় ‘দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ বাধ্য হয় পেনশন খাতের অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে  হস্তক্ষেপ করতে।

প্রধানমন্ত্রী হলেও তার প্রশাসন, দল এবং পার্লামেন্ট- সর্বত্রই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চরম ব্যর্থ হন তিনি। বরং একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধেই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম সময়ে এমপিদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ এবং তাকে উৎখাতের চেষ্টা করার গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

৪৫ দিনের মধ্যে দুজন শীর্ষ মন্ত্রীকে হারান লিজ ট্রাস। প্রথমে অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ওঠা বিতর্ক সামলাতে অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেংকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন তিনি। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান পদত্যাগ করেন, যা প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।

অনুগতদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন লিজ। দলের উপর কর্তৃত্ব চালানোরও চেষ্টা করেন লিজ ট্রাস। যা তার পদত্যাগের বড় কারণ।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।