ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ডিএনএ মেলেনি, সেই শিশুর ‘জৈবিক পিতা’ বড় মনির নন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
ডিএনএ মেলেনি, সেই শিশুর ‘জৈবিক পিতা’ বড় মনির নন

ঢাকা: ধর্ষণ মামলায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের সঙ্গে ভিকটিমের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুর ডিএনএ মেলেনি। ডিএনএ টেস্টের এমন প্রতিবেদন দাখিলের পর হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

 

বড় মনিরের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে সোমবার (০৯ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।

পরে আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ জানান, ওই কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুটির ‘জৈবিক পিতা’ গোলাম কিবরিয়া নন বলে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে এসেছে।  প্রতিবেদন দাখিলের পর শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে গোলাম কিবরিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকলো এবং কারামুক্তিতে এখন আইনি কোনো বাধা নেই।  

বড় মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) তানভীর হাসান ছোট মনিরের ভাই ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।

৫ এপ্রিল রাতে এক কিশোরী বাদী হয়ে গোলাম কিবরিয়া বড় মনির নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।  

মামলায় বলা হয়, ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী (১৭) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মামলায় গোলাম কিবরিয়া বড় মনির পাশাপাশি তার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।  

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বড় মনির তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব-পরিচিত। হোয়াটস অ্যাপে তাদের কথা হতো। ওই কিশোরীর ভাইয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে সমস্যা হয়। এ কথা বড় মনিরকে জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বড় মনির পরে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ওই কিশোরীকে শহরের আদালতপাড়ায় নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০ তলা ভবনের চারতলার ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিশোরীটিকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। তাতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীটির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বড় মনির কক্ষে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ছবি তুলে রাখেন। ধর্ষণ শেষে কাউকে এ কথা জানাতে নিষেধ করেন এবং কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে প্রায়ই কিশোরীটিকে ধর্ষণ করতেন বড় মনির।  

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ধর্ষণের কারণে কিশোরীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ কথা জানালে বড় মনির তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির কিশোরীটিকে আদালতপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় কিশোরীটিকে।  

পরে তাকে সেখানে আবার ধর্ষণ করেন বড় মনির। ধর্ষণের পর বড় মনিরের স্ত্রীর মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে। তারপর থেকে কিশোরীটিকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে ভুক্তভোগী।

এ মামলায় ১১ জুলাই বড় মনির হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সেই জামিনাদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। ২৭ জুন ভুক্তভোগী এক সন্তানের জন্ম দেয়। সেই সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন। সেই অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৩
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।