ঢাকা: নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ হতে সম্পূর্ণরূপে প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। নতুন বছর উপলক্ষে প্রধান বিচারপতির এমন আশার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট শপথ নেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা আনার মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
এছাড়া, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বর্তমানে পূর্ণ গতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যতদ্রুত সম্ভব বিচার বিভাগ থেকে সব প্রকার দুর্নীতি বিলোপের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীর জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক বিচারসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের সেবার মানোন্নয়নে প্রধান বিচারপতি ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে প্রতি মাসে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে মনিটরিং সভা নিয়মিতভাবে আয়োজিত হচ্ছে। সভায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ দপ্তরে সেবা সহজীকরণে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন ।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতে সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে একটি একটি হেল্পলাইন (ফোন নম্বর) চালু করা হয়েছে। ওই হেল্পলাইনে কল করে সেবাগ্রহীতা প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন কিংবা যে কোনো অনিয়ম সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃকপক্ষকে অবহিত করতে পারেন। প্রাপ্ত অভিযোগগুলো সম্পর্কে তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
প্রধান বিচারপতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, দেশের উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ই-জুডিসিয়ারির আওতায় আনতে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, বিচার বিভাগে মেধার চর্চার বিকাশ বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২৫ সালের প্রথম দিকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে।
বিচার বিভাগ মূলত দেশের জনগণের সেবার জন্যেই গঠন করা হয়েছে। তাই বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা কী এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কী করণীয় বা সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কীরূপ সক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন- সে সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে ২০২৫ সালে দেশের সব বিভাগীয় শহরে অবস্থিত আদালতসমূহে স্টেকহোল্ডার মিটিং আয়োজন এবং সেই মিটিংয়ে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রধান বিচারপতির রয়েছে।
২ জানুয়ারি থেকে কাগজমুক্ত কোম্পানি আদালত
সুপ্রিম কোর্ট বলছে, আগামী ২ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি সংক্রান্ত একটি বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়ন ও উদ্ভাবনে ওই বেঞ্চের সকল কাগজপত্র জমা প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।
নতুন বছরে পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বেঞ্চগুলোতেও কাগজমুক্ত কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রধান বিচারপতির রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের জেলা আদালতগুলোতে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে আশা প্রধান বিচারপতির।
নতুন বছরে প্রধান বিচারপতির আশা, তার ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মাধ্যমে ২০২৫ সাল হবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য ‘নবযাত্রার একটি বছর’।
আর ২০২৫ সালেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ হতে সম্পূর্ণরূপে প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে এবং এভাবে রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন অঙ্গ হিসেবে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৫
ইএস/এইচএ/