অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যেখানে নাকি এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ হয়ে যাবে সেখানে জামিন দেওয়া সঠিক হবে না।
রোববার (১৮ মার্চ) এ বিষয়ে আদালতের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা এ কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেছি, হাইকোর্ট যে যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন সেটা সঠিক হয়নি। তার কারণ খালেদা জিয়ার দণ্ড পাঁচ বছর। এর মধ্যে সাজা ভোগ করা সময় শেষ হয়ে যাবে অথচ আপিল শুনানি হবে না এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। অথচ আপিলটা শিগগিরই শুনানি করা সম্ভব। তার বয়স এবং সামাজিক মর্যাদার যে বিষয়গুলো হাইকোর্ট বিবেচনায় নিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা বলেছি, তাকে ১০ বছরই সাজা দেওয়ার কথা। কিন্তু বয়স, সামাজিক মর্যাদা চেনা করেই নিম্ন আদালত তাকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছেন।
‘যে বিবেচনা করে নিম্ন আদালত সাজা কমিয়ে দিয়েছেন সেই একই বিবেচনা করে হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। তিনি বয়স্ক, তার সামাজিক মর্যদা আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারদের(বিচারাধীন অবস্থায় কারাবন্দির) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে ৪৯৭ ধারা বলে। যেখানে সাজা হয়ে গেছে সেখানে ৪২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে। সেখানে বয়স অসুস্থতার কথা বলা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন আদালত কঠোরভাবে তার বিচার করে। ’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের উদাহরণ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে যে, রাষ্ট্রনায়করা দেশ থেকেই পালিয়ে গেছেন দণ্ড ভয়ে বা দণ্ড এড়ানোর জন্য। এখানে যে পাঁচ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে, এই পাঁচ বছরের মধ্যে মাত্র দুই মাস-আড়াই মাস গেছে। অন্য একজন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তারও পাঁচ বছর সাজা হয়েছিল। তাকে সাড়ে তিন বছর সাজা ভোগ করতে হয়েছে। ’
ভারতের লালু প্রসাদ যাদবের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, উপমহাদেশের আরেকজনের প্রসঙ্গ টেনেছি, তিনি লালু প্রসাদ যাদবের প্রসঙ্গ টেনেছি। পশুখাদ্যে ৮৯ লাখ টাকা দুর্নীতির অভিযোগে তাকে সাড়ে তিন বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে ঝাড়খন্ড হাইকোর্ট তাকে জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে নাকি এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ হয়ে যাবে সেখানে জামিন দেওয়া সঠিক হবে না। আরেকটা কথা বলেছি, এই ট্রাস্টের টাকা উঠানো বা জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু আদালত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ভালোভাবে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে এসেছেন। ফলে তিনি কিছু জানতেন না এটা
সঠিক না।
‘সবচেয়ে বড় কথা হলো- উনি এবং উনার পুত্র তারেক রহমান একই বাড়িতে থাকতেন। যে চেকের মাধ্যমে তারেক রহমান এবং মিজানুর রহমান ছয়টি চেকের টাকাগুলো তুলে নিয়েছেন, এফডিআর করেছেন এগুলোতে একেবারে অস্বীকারের মতো কিছু নাই। ’
তিনি বলেন, আপিলটা যদি দীর্ঘ সময় শুনানি হয় সেক্ষেত্রে তার জামিন বিবেচেনা করা যেতে পারে। আমরা বারবার বলছি আপিলটার শুনানি হোক। চারমাস সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। আমি বলেছি প্রয়োজনে আরও সংক্ষিপ্ত সময় বেঁধে দেওয়া হোক আপিলের পেপারবুক তৈরি করার জন্য। তারপরও আপিল শুনানি করে উনি যদি মুক্ত হতে পারেন ভাল কথা।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আরেকটা কথা বলেছি, এই বিচারটাকে কাগুজে বিচারে পরিণত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। এই মামলায় ২৬ বার হাইকোর্টে আসা হয়েছে বিভিন্ন অজুহাতে। বিভিন্নভাবে এই মামলাটিকে বিলম্বিত করা হয়েছে। এরকম অবস্থাতে এখন যদি উনি জামিন পান তাহলে আপিল শুনানি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যে কারণে আমরা বলেছি, আপিলটা শুনানি হোক যা হয় নির্ধারিত হবে আদালতের মাধ্যমে। আড়াই মাস জেলে আছেন বাকি দুই-তিন মাসের মধ্যে আপিল শুনানি হয়ে যাবে। এসব যুক্তি তুলে ধরে আমরা তার জামিনের স্থগিত চেয়েছি। ’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করে বলেছি, এ অবস্থায় উপমহাদেশে ও আমাদের দেশে যতগুলো সিদ্ধান্ত আছে সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগ যদি কোনো জামিন আবেদন গ্রহণ করেন ও জামিন দেন এবং সেখানে যদি কারণ উল্লেখ করে জামিন দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সাধারণত আপিল বিভাগ কোনো হস্তক্ষেপ করেন না।
‘আমরা মনে করি, আইনগত যে দিকগুলো আমরা আদালতে তুলে ধরেছি ইনশাল্লাহ সবই আমাদের পক্ষে। দুদক-রাষ্ট্রপক্ষ এর কোনো কনট্রোভার্ট করতে পারেনি। ফলে আমরা আশা করি হাইকোর্ট যে জামিন আদেশটি দিয়েছেন সেটি বহাল রাখবে আপিল বিভাগ। ’
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, যে চারটি কারণে হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে, আমরা চেষ্টা করেছি সে চারটি কারণেই খণ্ডন করার জন্য। একটি ছিল এটি শর্ট পিরিয়ড অব সেনটেন্স (স্বল্প মেয়াদের সাজা)। কিন্তু শর্ট পিরিয়ডের কোনো সংজ্ঞা নেই। পাঁচ বছর সাজা, উনি খেটেছেন মাত্র দুই মাস বা আড়াই মাস। এটা শর্ট সেনটেন্স বলা যাবে এর পক্ষে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের একটা রায় উপস্থাপন করে বলেছি দুই বছরের সাজায় উনি জামিন দেননি। বলেছিলেন হাইকোর্টে গিয়ে নতুন করে শুনানি করতে। শুনানির সুযোগ না হলে আবার নতুন করে জামিন আবেদন করতে। এটা আমার সপক্ষে আমি নজির উপস্থাপন করেছি।
‘মেডিকেলের একটা গ্রাউন্ডে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন। আমরা বলেছি হাইকোর্টে মেডিকেল সার্টিফিকেটের পক্ষে কোনো কাগজ তারা দিতে পারেননি। আরেকটি ছিলো তিনি জামিনের অপব্যবহার করেননি। বিচারিক আদালতের আদেশ থেকে দেখিয়েছি উনি আদালতের পারমিশন না নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন। এটা বলা যাবে না যে, উনি জামিনের অপব্যবহার করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
ইএস/এমএ