তবে আদেশ নিয়ে খালেদার আইনজীবীদের এ বক্তব্যকে ‘রাজনীতিকরণের চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সোমবার (১৯ মার্চ) আপিল বিভাগের আদেশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন দুই পক্ষ।
আপিল বিভাগের আদেশে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আপিলের শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতের নজির বলে যে, জামিন আবেদনের শুনানিতে কখনো মেরিটে (মামলার বিষয়বস্তু) যায় না। আদালত আমাদের কথাও শুনলেন এবার, প্রথমতো শুনলেনই না। এবার শুনলেন। কিন্তু আজকে যে আদেশটি দিলেন, আদেশে বললেন যে, উনারা (আপিল বিভাগ) সবাই মিলে এই আদেশটি দিয়েছেন, লিভ দিলেন (আপিলের অনুমতি), স্টে (জামিন স্থগিত) করলেন। ’
‘প্রথমে ২২ মে মামলাটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করলেন। পরে ৮ মে তারিখে নির্ধারণ করলেন। আমরা বুঝতেই পারলাম না, কী আদেশ দিলেন। এরপরই চলে গেলেন অন্য আইটেমে (অন্য মামলার শুনানি)। ’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘পরবর্তীতে আদালতকে বললাম যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে লোকজন আসে আপনাদের কাছে বিচার পাওয়ার জন্য, বিচারপ্রার্থী মানুষরা জানতে চান, কী আদেশ দিলেন? কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিভ মঞ্জুর করলেন? সেটা তো কেউ জানলো না। আমি বারের (সুপ্রিম কোর্ট বার) পক্ষে এটা জানার অধিকার আছে, বারের মেম্বারদের জানাবার অধিকার আছে। তখন আদালত বললেন, ‘আমরা এই সমস্ত কনভিকশন ইত্যাদি ইত্যাদি কনসিডার করে দিলাম’। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বললেন না, আমি তখন বললাম আমরা তো মেরিটে কোনো আর্গুমেন্ট এখানে করি নাই। তার কোনো সদুত্তর আদালত আমাদেরকে দেননি। ’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা নজিরবিহীন আদেশ হয়েছে। আদালতে বলেছি, অতীতে ৫ বছরের সাজায় যে আপনারা যে জামিন দিলেন সেগুলোর এখন কী হবে? তার কোনো উত্তর আদালত দেননি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে জাতির উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এটা একটা অনভিপ্রেত আদেশ আজকে হলো, দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজকে যে আদেশটি দিলেন, এতে আমরা খুব মর্মাহত হয়েছি। আমরা নজিরবিহীন বলতে বাধ্য হচ্ছি এই কারণে, অতীতে এই ধরনের আদেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালত দেননি। ’
তার আগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি বলবো এটা কিছুটা নজিরবিহীন। এটা আমরা কখনো শুনিনি এবং প্রত্যাশাও করি না। কিন্তু যেহেতু উচ্চতম আদালত আদেশ দিয়েছেন। আমাদের তো আইনি লড়াই ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। আর একটা হলো রাজপথে আন্দোলন। সেটা তো সুপ্রিম কোর্টে করতে পারবো না। আমরা যারা আইনজীবী আছি আপ্রাণ চেষ্টা করবো যত শিগগির সম্ভব খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে। ’
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত শুনানির জন্য ২২ মে দিন ধার্য করেছিলেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এগিয়ে এনে ৮ মে নির্ধারণ করেছেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাকে কারাভোগ করতে হবে। ’
আদেশকে ‘নজিরবিহীন’ বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটি ভালো উচ্চারণ নয়। জিনিসটাকে রাজনীতিকরণের জন্য তারা চেষ্টা করছেন। এখানে খালেদা জিয়াকে সমস্তরকম সুবিধা দিয়ে আদালত এ দণ্ড প্রদান করেছেন। দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত যে কতখানি মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। ন্যায়নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন সেটি প্রমাণ পায় তার সামাজিক মর্যাদা ও বয়স বিবেচনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। যদিও অন্যদের ১০ বছর দিয়েছেন। কাজেই এটাকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চাইছেন, তারা নিশ্চয়ই সফল হবেন না। কারণ এটা কোনো রাজনীতির বিষয় নয়। এটা সাধারণ অপরাধের বিষয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
ইএস/এইচএ/