এক বছর সময় চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে রোববার (২৫ মার্চ) আপিল বিভাগে এমন সুযোগ চেয়ে শুনানি করেছেন বিজিএমই’র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।
শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেছেন।
শুনানির শুরুতে কামরুল হক সিদ্দিকী আদালতে বলেন, ডেমোলিশড (বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে) করার জন্য আদেশ ছিলো। এটা করতে আমাদের যে স্টেপগুলো নিয়েছি, সেগুলো বলছি।
তখন আদালত বলেন, ‘কবে প্লট নেবেন, কবে বিল্ডিং করবেন, আমরা টাইম দিব কেন? র্যাংগস ভবন স্টেক ডাউন করা হয়েছে। আপনাদের বিল্ডিংটা অবৈধভাবে করা হয়েছে’।
জবাবে কামরুল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। এ সময় আদালত বলেন, কি করবেন না করবেন সেটা আপনাদের বিষয়। এটা অবৈধভাবে করা হয়েছে।
এ সময় আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, কতটুকু করেছি সেটাই বলছি। ১১ কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়েছে। ১৬টি বিভাগ থেকে অনাপত্তি নেওয়া হয়েছে। মিউটেশনও করেছি।
আদালত বলেন, এটা তো আমাদের হেডেক না। এটা কি আমাদের দেখার বিষয়? জবাবে কামরুল হক বলেন, ঢাকার প্রতিটি স্থানে জায়গা খোঁজ করেছি। স্থান পাইনি।
আদালত বলেন, শেষ আদেশ কবে হয়েছিল, তখনও কি এক বছর সময় চেয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, গত ৮ অক্টোবর। যতটুকু সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছি। এ সময় আদালত বলেন, এভাবে চলতে থাকলে পাঁচ বছর লাগবে।
তখন কামরুল হক বলেন, এক মাসের মধ্যে ভবনের (উত্তরায় নতুন ভবন) ফাইলিংয়ে যেতে পারবো।
আদালত বলেন, হাইকোর্ট, হাইকোর্ট আদেশ কবে হয়েছে। আপিল কবে হয়েছে? রিভিউ কবে হয়েছে?
জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ রিভিউ খারিজ হয়।
তখন আদালত বলেন, এ বছরও পার করে দিচ্ছেন, তাহলে আদেশ দেওয়ার মানে কি?
জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, এটা (বিজিএমইএ) ন্যাশনাল ইকোনমির লাইফ লাইন।
এ সময় আদালত বলেন, এ কথা বলবেন না। বিল্ডিং ভেঙে ফেলতে হবে। আপনারা না পারলে রাজউককে করতে হবে।
কামরুল তখন আদালতকে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের আসামিও শেষ আবেদন করে থাকে। আমিও সেই সুযোগ চাচ্ছি। ’
এর আগে বহুতল ভবন ভাঙতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে।
গত বছর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে ছয়মাসের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
ওই সময় শেষ হওয়ায় একই বছরের ২৩ আগস্ট আরও এক বছর সময় চেয়ে এ আবেদন জানিয়েছিলো বিজিএমইএ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৮ অক্টোবর সাত মাস সময় দেন আপিল বিভাগ। পরে এ সময় শেষ হওয়ার আগেই ফের এক বছর সময় চেয়েছে বিজিএমইএ।
সেই আবেদনের পর ৮ অক্টোবর বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন।
পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।
একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।
পরে একই বছরের ৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন জানায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে- তা ৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে ভবন ভাঙার রায় বহাল ও ভবন ভাঙতে ছয়মাস সময় দেন। পরবর্তীতে আরও একদফা সাত মাস সময় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
ইএস/জেডএস