সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এমন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিবেদনটি দেখার পর এ বিষয়ে রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে বলেছেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
পরে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কতগুলো শিল্প-কারখানা রয়েছে তার তালিকা ছয় মাসের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ আদেশ অনুসারে পরিবেশ সচিব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে তিনি এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সুন্দরবন সংলগ্ন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের তালিকাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্যাদির বিবরণ। ’
‘১৯৯৭ সালে ইউনসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। পরিবেশ দূষণ যাতে ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য যাতে কোনো প্রকার নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এ লক্ষ্যে পূর্ব সতকর্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চতুর্দিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ’
‘দাপ্তরিক নথি পর্যালোচনা ও সরেজিমনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন ইসিএ এলাকায় সর্বমোট ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। বাগেরহাট জেলায় ৭৮, খুলনায় ৯২, সাতক্ষীরায় ২০টি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ। ’
২৪টি লাল শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, রেড জোনে যেগুলো সেগুলো সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য রেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে রুল শুনানির সময় বিশেষজ্ঞ মতামতের দরকার। তাহলে এগুলো বেরিয়ে আসবে কতটুকু ক্ষতিকর। যে পর্যন্ত এটা করা যাবে না, সে পর্যন্ত বলা যাবে না যে এটা বাস্তবে ক্ষতিকর।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, আজ একটি রিপোর্ট পেশ করে বলেছে যে, সুন্দরবনের ১০ কিলোমটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারী (লাল শ্রেণীর) শিল্প প্রতিষ্ঠান ২৪টি। এই ২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারবে না। পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (এনভায়রনমেন্টাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া- ইসিএ) অর্ডিন্যান্স ১৯৯৯ অনুযায়ী প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকার মধ্যে এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ নেই। এছাড়া বাকি যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এর থেকেও বেশি। ফলে আদালত এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে ফেলার আদেশ দেবে কি দেবে না, সে ব্যাপারে ৯ মে পরবর্তী শুনানি হবে।
সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শিল্প-কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট করেন।
গত বছরের ২৪ আগস্ট আদালত প্রতিবেদন চেয়ে রুল জারি করেন এবং নতুন কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮
ইএস/এএ