বৃহস্পতিবার (০৫ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে ক্ষতিকর গেমসমূহে আসক্তদের কাউন্সেলিং এবং তদন্তের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
আগামী ২৬ মে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে এবং ২৭ মে পরবর্তী আদেশের জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় থাকবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব।
মোবাইলে ব্লু হোয়েলের মরণনেশার ফাঁদে পড়ে রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার (১৩) আত্মহত্যার খবর প্রকাশের পর তার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধনসহ তিন আইনজীবী গত বছর রিট করেন।
রিটের পর ডেথ গেম হিসেবে পরিচিত ব্লু হোয়েল গেমসহ আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী এ জাতীয় সকল গেমের গেটওয়ের লিঙ্ক ও অ্যাপলিকেশন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এছাড়াও যারা এসব গেমসে আসক্ত তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি এবং আসক্তদের কাউন্সেলিং করতে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করতে নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন অপারেটরদের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফার ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করা হয়েছিল।
হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ স্পেশাল মনিটিরিং কমিটি গঠন করে। হাইকোর্টে দাখিল করা ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়। তবে কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের নির্দেশে পুলিশ সদর দপ্তর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার এবং বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কো-অপ্ট করা হয়।
কমিটির প্রথম সভা ১৪ মার্চ এবং দ্বিতীয় সভা ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষতিকর মোবাইল/অনলাইন গেমস সংক্রান্ত বিশদ পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডার্ক ওয়েব/ডিপ ওয়েবে এসব ক্ষতিকর, আত্মঘাতীমূলক অনলাইন গেমসসমূহ খেলার জন্য ক্রিপটো কারেন্সি বা বিট কয়েনের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে হয়। যা ছাত্র ছাত্রী বা সাধারণ জনগণের জন্য দুরুহ।
হলিক্রস স্কুলের ছাত্রী স্বর্ণার আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ক্ষতিকর অনলাইন গেমসের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে নিউমার্কেট থানায় যোগাযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জানান, সুরতহাল অনুযায়ী ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রতীয়মান হলেও এ সংক্রান্ত ক্ষতিকর অনলাইন গেমসের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা পরিলক্ষিত হয়নি।
এ কমিটির সদস্য সচিব বিটিআরসির মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল ক্ষতিকর মোবাইল বা অনলাইন গেমসসমূহ প্রতিরোধে বিটিআরসির গৃহীত পদক্ষেপগুলো কমিটির সদস্যদের অবহিত করেন।
পদক্ষেপগুলো হলো-এক. হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মোবাইল ও অনলাইনে ক্ষতিকর গেমসসমূহে বন্ধ করার জন্য বিটিআরসির লাইসেন্সপ্রাপ্ত সকল ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
২.অনলাইনভিত্তিক আত্মঘাতী/সংঘাতমূলক/রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ওয়েবসাইট ও গেমসসমূহের ব্যবহার সীমিত করতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত নতুন ও চলমান সব প্রমোশনাল ইন্টারনেট/ডাটা অফার বন্ধ রাখার জন্য মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
৩.কতিপয় ক্ষতিকর অনলাইন গেমস, অ্যাপলিকেশন্স, ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখপূর্বক তা বন্ধ করার জন্য সকল আইআইজি (ইন্টারনেট গেটওয়ে) কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এগুলো ছাড়াও অন্য কোনো ক্ষতিকর অনলাইন গেমস, অ্যাপলিকেশন্স, ওয়েবসাইট পাওয়া গেলে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য বিটিআরসিকে অবহিত করতেও জানানো হয়।
৪.ক্ষতিকর এসবের বিষয়ে জনসচেতনতায় স্ক্রলে প্রচারের জন্য সব টিভিকে অনুরোধ করা হয়।
কমিটির সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতিকর অনলাইন/মোবাইল গেমসের আবির্ভাব পরিলক্ষিত হলে এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিটিআরসি প্রয়োজনীয় প্রচারণা চালাবে।
ক্ষতিকর অনলাইন/মোবাইল গেমসের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ ও মনিটরিংয়ের জন্য ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে বিটিআরসি যৌথভাবে কাজ করবে।
পরে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক একটি স্পেশাল মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পূর্বে যে গেটওয়ের মাধ্যমে এটা আসতো সেটা অলরেডি স্টপ হয়ে গেছে। রাত ১২টার পরে যে সমস্ত অপারেটর সুবিধা করে দিতো, যার কারণে স্বল্প খরচে, অনেক সময় দেখা গেছে পয়সা না দিয়েও সুযোগ দিতো সে পথ এখন বন্ধ।
‘প্রত্যেকটা অপারেটরকে এটা বলে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও কোনো কিছু দৃষ্টিগোচর হলে তা আইন শৃঙ্থলা বাহিনী বা বিটিআরসিরকে জানাতে বলা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, স্কুলছাত্রী স্বর্ণার আত্মহত্যা ব্লু হোয়েলের কারণে নাকি অন্য কারণে- সেটার জন্য মামলা পেন্ডিং আছে। সেটা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবে বলা যাবে না- সে আসলে কি কারণে মারা গেছে।
‘এর বাইরেও আরও কিছু ইস্যু ছিল। যেমন কি কারণে আত্মহত্যা করেছে। কাউন্সেলিং হয়েছে কি-না। আদালত সময় দিয়েছেন-২৬ মের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য। ২৭ তারিখে এটা আবার তালিকায় আসবে। ’
হুমায়নু কবির পল্লব বলেন, এসব গেমসে আসক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি এবং আসক্তদের কাউন্সেলিং করার নির্দেশনা ছিল। সেটাতো করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে ২৬ মে এবং ২৭ মে পরবর্তী আদেশের জন্য আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮
ইএস/এমএ