বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) টাঙ্গাইল সদর ও ঘাটাইল আমলি আদালতে পুলিশ পৃথক দু’টি আবেদন করে।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি এমপি রানা।
টাঙ্গাইল সদর আমলী আদালতে যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ এমপি রানাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতে এ আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুম আবেদন গ্রহণ করে ৯ মে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
অপরদিকে ঘাটাইল জিবিজি কলেজছাত্র সংসদের সহ সভাপতি (ভিপি) ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ রুবেলকে হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) শামসুল ইসলাম ঘাটাইল আমলি আদালতে এমপি রানাকে গ্রেফতার দেখানোর আরেকটি আবেদন করেন। ঘাটাইল আমলি আদালতে করা এ আবেদনের প্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম গোলাম কিবরিয়া ১০ মে আবেদনের শুনানির জন্য তারিখ দিয়েছেন।
আদালতে করা আবেদনে অশোক কুমার সিংহ জানান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাদের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন। ঘটনার পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এক বছর পর ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে। এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার খন্দকার জাহিদ গত বছরের ১১ মার্চ, শাহাদত হোসেন ১৬ মার্চ এবং হিরন মিয়া ২৭ এপ্রিল এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ্য করেন এমপি রানার দিক নির্দেশনায় যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। তাদের জবানবন্দিতে এমপি রানার এ মামলায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
অপরদিকে ঘাটাইলের ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ রুবেলকে হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম আদালতে করা আবেদনে জানান, ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর রাতে একদল সন্ত্রাসী আবু সাঈদকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। হামলায় আবু সাঈদ পঙ্গু হয়ে যায়। এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আসামি আব্দুল জব্বার বাবু ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে আব্দুল জব্বার জানান, এমপি রানা কারাগারে থেকে তাকে কিছু করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে সাঈদকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করা হয়।
উভয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের আবেদনে জানিয়েছেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে জেল হাজতে আটক এমপি রানাকে গ্রেফতার দেখানো প্রয়োজন। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে পরে রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় এমপি রানা ও তার ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। ফারুক হত্যা মামলায় এমপি রানার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জন আসামি রয়েছে। এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৮
আরবি/