ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ঐশীর বাবা-মা হত্যায় গৃহকর্মী সুমি খালাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৮
ঐশীর বাবা-মা হত্যায় গৃহকর্মী সুমি খালাস রায়ের পর আদালত থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় সুমিকে

ঢাকা: পুলিশের স্পেশাল  ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমিকে (১৬) বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

রোববার (০৬ মে) ঢাকার ১ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশু আদালতের বিচারক মো. আল মামুন এ রায় দেন।

জামিনে থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সুমি।

 

এদিকে রায়ের পর সুমিকে আইনি সহায়তা দেওয়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলানিউজ বলেন, পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় সুমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। মামলার প্রধান আসামি ঐশি আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে সুমির সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেননি। তাছাড়া মামলার বাদীর সুমির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সাক্ষ্যেও তিনি সুমির বিরুদ্ধে কিছু বলেননি।  

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় সুমির বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। এ রায়ের ফলে সুমি ন্যায়বিচার পেয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার ১ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশু আদালতের বিচারক আল মামুন রায়ের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও একমাস দণ্ড দেওয়া হয়। অপর আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পান।

ওইদিন ট্রাইবুনাল রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, সারাদেশ যেখানে শিশু নির্যাতনের বিপক্ষে সোচ্চার সেখানে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন শিশুর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন ছিল।

আসামিপক্ষ থেকে ঐশীকে শিশু, ঘটনার সময় ঐশী মাতাল ছিল আর হত্যাকাণ্ড ছিল নিছক একটি দুর্ঘটনা এমন দাবি বিচারক নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ঐশীর বয়স ১৮-এর বেশি।  

ঘটনার সময় তিনি শিশু ছিলেন না। আর হত্যাকাণ্ডটি নিছক দুর্ঘটনাও ছিল না। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুনের আগে তিনি বেশ সময় নিয়েই ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছেন বাবা-মাকে।

তবে মামলার আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার অংশের বিচার শিশু আদালতে হয়। ২০১৪ সালের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পায় সে।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে গ্রেফতার করা হয় অন্য দুই আসামি রনি ও জনিকে।

২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ঐশী। পরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট জমা দেন।

মামলায় ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে বাদী ঐশীর চাচা মো. মশিহুর রহমান রুবেলসহ ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা,  মে ০৬, ২০১৮
এমআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।