গত সোমবার (০৭ মে) আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের মামার কাছে শুনেছি তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। শুধু একটু জায়গা আছে, তবে ঘর নেই।
তখন আদালত বলেন, রুল শুনানি তো হবে। তবে এখন কিভাবে অন্তর্বর্তীকালীনভাবে তার পরিবারকে রিলিফ দেওয়া যায় তা দেখতে হবে।
এ সময় রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রুল জারির পর বিআরটিসি’র আইনজীবী মনিরুজ্জামান আমার সঙ্গে দেখা করেছেন, বলেছেন বিআরটিসি ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। এছাড়া স্বজন পরিবহনের একজন পরিচালকও আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারাও ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি রাজীবের খালা আমাকে ফোনেও জানিয়েছেন। আর চিকিৎসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে তো খরচ দিয়েছে সরকার।
এ সময় আদালত বলেন, রাজীবের মৃত্যুতে পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আমরা মর্মাহত। টাকা দিয়ে তো জীবনের মূল্য হয় না। যদি কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ দিতে বলি তাতে তো আর জীবন ফিরে পাবে না। এরপরও পরিবারের বিষয়টি দেখতে হবে।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, এই ঘটনার আইনের মধ্য দিয়ে বিচার হতে হবে। তখন আদালত বলেন, মিশুক মুনীরের মামলাটি দেখতে পারেন।
এ সময় রুহুল কুদ্দুস বলেন, পাইপে পড়ে নিহতের ঘটনায় শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।
তখন আদালত বলেন, সেটা তো ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। এখন দেখতে হবে যদি কেউ ইনটেনশনালি মার্ডার করে তখন তো ৩০২ তে মামলা আসা অমূলক নয়।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, আইন কমিশন চেয়ারম্যান প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ট্রাফিক আইনের সংশোধন চেয়েছেন। তার মানে এ ঘটনা সবাইকে স্পর্শ করে। রাজিবের দুই ভাইয়ের বয়স জানতে চান আদালত। জবাবে রুহুল কুদ্দুস জানান, একজনের ১৪ ও অপরজনের ১২ বছর।
এরপর আদালত বলেন, আমরা দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের আদেশ দেবো। কিন্তু গার্ডিয়ান কে? কার অনুকূলে দেবো?
রুহুল কুদ্দুস বলেন, তারা মামা ও খালা আছে। আদালত বলেন, খালাকে আগামীকাল নিয়ে আসেন এবং একটি আবেদন দেন। কী পরিমাণ দেওয়া যায়।
আদেশের পর আদালত থেকে বেরিয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের খালাকে নিয়ে আসতে বলেছেন আগামীকাল। এরপর আদালত ক্ষতিপূরণে আদেশ দেবেন।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক স্বজন পরিবহন এবং বিআরটিসিকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল (সোমবার) দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব হোসেন।
এরপর রোববার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
ইএস/জেডএস