ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভাগ্য খুলছে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির ‘মা’ মাসুরার

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
ভাগ্য খুলছে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির ‘মা’ মাসুরার উঠানে বসে আছেন মাসুরা।

রাজশাহী: মাসুরা বেগমের উচ্চতা মাত্র ৩৮ ইঞ্চি। এই ক্ষুদ্র উচ্চতা নিয়েও ‘মা’ হয়েছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বজরপুর গ্রামের মাসুরা।

তবে অভাব-অনটনের ভালো নেই তিনি।

স্বীকৃতি না মেলায় আজও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি তার। থাকেন পরের জমিতে ঘর করে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই। যেই চাচার জমিতে এত দিন ঘর করে আছেন, তিনিও এখন জায়গা ছেড়ে দিতে বলছেন! উপায় না পেয়ে মাসুরা এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থায় মাসুরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছিলেন।

আর তার জীবন গল্প নিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির ‘মা’, আজও মেলেনি স্বীকৃতি! বাংলানিউজে করা প্রতিবেদনের পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে। এরপর বিষয়টি নজরে এসেছে সরকারেরও। আর তাই এখনই পাল্টাতে শুরু করেছে মাসুরার সেই করুণ জীবনগাথা। এরই মধ্যে সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন আর্থিক সহযোগিতা। আর পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার জন্য শিগগিরই পাচ্ছেন একটি সুন্দর পাকা বাড়িও। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় এবং এশিয়ার প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির মা মাসুরা বেগমের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

তাই মাসুরা এখন কেমন আছেন আর আর্থিক সহযোগিতা ও বাড়ি পাওয়ার আশ্বাসের পর তার এখনকার প্রতিক্রিয়াই বা কী? সেই কথা জানতে এই প্রতিবেদক আবারও গিয়েছিলেন তার বাড়িতে। আর কয়েক মাসের ব্যবধানে এবার ভাগ্যপীড়িত নারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এ যেন এক অন্য মাসুরা!

তার চোখেমুখে সেই ক্ষোভ আর হতাশার ছাপ আর নেই। কথা বলতেই মনের উচ্ছ্বাস আর আনন্দগুলো যেন বার বার বেরিয়ে আসতে চাইছিল মাসুরার। গ্রামের সহজ-সরলতায় ভরা মাসুরা সেই হাসিমাখা মুখই যেন বলছিল, আর যাই হোক মাসুরা জীবন থেকে সেই অমানিশার অন্ধকার কেটে গেছে। হঠাৎই যেন তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে যাচ্ছে। যেই মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য মাসুরা এত দিন উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন-রাত পার করছিলেন; তা এখন আর নেই।

আর সেই সুখানুভবই যেন হাসি হয়ে বার বার স্পষ্ট হয়ে উঠছিল মাসুরার মুখে। ঘোমটা টেনে কখনও কখনও তা আড়াল করার বৃথা চেষ্টাও করেন মাসুরা। কিন্তু এত কিছুর পরও মনের বাধভাঙা সেই আনন্দ আজ যেন তিনি কারও কাছেই লুকাতে পারেননি।

কথা বলতেই মাসুরা জানান, সংবাদ প্রকাশের পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিলের নজরে এই বিষয়টি আসে। তিনি সম্প্রতি তাদেরকে তার নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন।

এছাড়া শিগগিরই তাকে একটি পাকা বাড়ি করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। এরপর তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুজিব বর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তার গ্রামেই নির্মাণ হওয়া ছয়টি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়ি নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন মাসুরা। এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা এবং কাগজপত্র চূড়ান্ত করা হয়। পরে মাসুরা ঠিক যেই বাড়িটিই পছন্দ করেন তার ইচ্ছা অনুযায়ী সেই বাড়িটিই একটি পাকাপোক্তভাবে তার নামে বন্দোবস্ত করা হয়।

রাজশাহী জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা ভূমি অফিস যৌথভাবে এই বিষয়টি চূড়ান্ত করে। ওই বাড়ির কাজ এখন প্রায় শেষ জানুয়ারির যেকোনো সময় ওই নতুন বাড়িতে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

মাসুরা বেগম এজন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি বাড়িতে ওঠার পর তার অথবা তার স্বামীর একটি কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে দেওয়ারও দাবি জানান।

মাসুরা বাড়ির বিষয়টি জানতে চাইলে রাজশাহীর পবা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, মাসুরার বিষয়টি নজরে আসার পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া মুজিববর্ষে ভূমিহীনদেরকে জন্য প্রধানমন্ত্রী তরফ থেকে যেই আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হয়েছে সেখান থেকে একটি বাড়ি মাসুরাকে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। এরপর তিনি মাসুরার ইচ্ছে অনুযায়ী তার নিজ গ্রামেই এই প্রকল্পের যেই ছয়টি বাড়ি হচ্ছে সেখান থেকে একটি বাড়ি তার জন্য বরাদ্দ করেন। বাড়ির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ।  

জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাড়িগুলো হস্তান্তর করবেন। তখন মাসুরার হাতেও তার বাড়ি চাবি এবং তার কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে বলেও উল্লেখ করেন পবা উপজেলার এই সরকারী কমিশনার (ভূমি)।

এদিক রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল বলেন, মাসুরার বিষয়টি তিনি জানতে পেরে মাসুরা দম্পতিকে তার কার্যালয়ে দাওয়াত করেছিলেন। আর কিছু আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন এবং আরো কিছু আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এছাড়া তার মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় ভূমিহীনদের জন্য মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের তরফ থেকে গৃহহীন মানুষের যেই বাড়ি দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে একটি বাড়ি মাসুরাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তার বাড়ির কাজও প্রায় শেষ।  জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী এই বাড়িগুলো উদ্বোধন করবেন। তার পরপরই এই মাসুরা দম্পতিও তাদের বাড়ি বুঝে পাবেন বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।