ঢাকা: মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে বিআরটিসির শাটল বাস থাকলেও মেট্রো যাত্রীরা সেগুলো খুঁজে পাননি। ফলে তারা বাসগুলোতে চড়তেও পারেননি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যায়।
এদিন সকালে মেট্রোরেলের বেশ কয়েকটি ট্রেন উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ে এসে পৌঁছায়। কিন্তু স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত শাটল বাস সার্ভিস খুঁজে পাননি। অন্যদিকে বাস কাউন্টারে ২০টি বাস অপেক্ষা করলেও সেখানে কোনো মেট্রোরেলযাত্রীর দেখা মেলেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) শাটল বাস সংশ্লিষ্টরা যাত্রীদের অপেক্ষায় ছিলেন। আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের বি গেটের মুখেই আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল রুটের শাটল বাস সার্ভিসের কাউন্টার। বাসের সর্বোচ্চ ভাড়া ৩০ টাকা (মতিঝিল) এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু সেখানে কোনো যাত্রীর দেখা মেলেনি।
জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই এমনটি ঘটেছে। আর হয়রানির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা।
সকাল ৯টার দিকে অবশ্য সাধারণ ১০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম বাস আগারগাঁও স্টেশন ছেড়ে যায়। সে বাসে কোনো মেট্রোরেলের যাত্রী ছিলেন না।
আগারগাঁও স্টেশন মূলত ৪টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে। এসব পথের মধ্যে এ ও ডি গেট ফার্মগেটমুখী সড়কে এবং বি ও সি গেট মিরপুরমুখী সড়কে নেমেছে। এসবের মধ্যে আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল রুটের বাসগুলোর জন্য ডি গেটের সামনে কাউন্টার বসিয়েছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এই গেটটিই সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
বিষয়টি জানার পর যাত্রীরা বলেন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিইনি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
উত্তরা থেকে আসা মেট্রোরেলের যাত্রী শাহরিয়ার হাসান বলেন, আমাদের শুধু একটি গেট দিয়ে বের হতে দিয়েছে। বের হয়ে দেখলাম আইডিবি ভবনের কোণায় মিরপুরমুখী সড়কে নেমেছি। কিন্তু এখানে কোনো বিআরটিসির বাস নেই। আমরা তো জানতাম বিআরটিসির বাস আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু বাস কোথায়?
বাস কাউন্টারের সামনে থাকা গেট বন্ধ রাখা হয়েছে জানার পর তিনি বলেন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রাস্তা পার হয়ে ওপারে গিয়ে বাসে উঠতে হবে। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
আগারগাঁওয়ে দায়িত্বরত বিআরটিসির কল্যাণপুর ডিপোর কন্ডাক্টার শয়ন কবির বলেন, আমরা সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে এখানে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। অথচ যে গেটের সামনে বাস রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেই গেটটি বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আমরা তো ভেবেছি এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেন আসেনি, তাই কোনো যাত্রী নামছে না। কিন্তু পরে জানলাম কর্তৃপক্ষ গেটটি বন্ধ রেখেছে।
তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তাদের যাত্রীগুলোকে আমরা নির্বিঘ্নে মতিঝিল পৌঁছে দেব। কিন্তু তাদের ভুলে এই যে দেড় ঘণ্টা সময় অপেক্ষা করতে হলো এটি আমাদের অনেক বড় লোকসান। অন্য রাস্তায় ২০টি বাস দেড় ঘণ্টা সময় যে টাকা ইনকাম করতো, সেই রাজস্ব হারালো সরকার।
ডিএমটিসিএল এর এমআরটি লাইন-৬ সংক্রান্ত প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পুলিশ ভুল করে ওই গেটটি বন্ধ করে রেখেছে। আমরা সাড়ে নয়টার পরে ওই গেটটি খুলে দিয়েছি।
এদিকে ১০ জন যাত্রী নিয়ে মতিঝিল গন্তব্যে আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেল শাটল বাস সার্ভিসের প্রথম বাস ছেড়ে গেছে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। তবে ওই বাসে কোনো মেট্রোরেলের যাত্রী ছিল না। আগারগাঁও স্টেশন ছেড়ে যাওয়া প্রথম শাটল বাসটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৬১৪৮। বাসটির চালক মিরপুর ১২ নম্বর বাস ডিপোর অভিজ্ঞ চালক মো. নজরুল ইসলাম (১)। আর তার সহকারী হিসেবে কাজ করছেন আছেদুল।
আগারগাঁও স্টেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআরটিসির কল্যাণপুর বাস ডিপোর ট্রাফিক ইনচার্জ মো. নাদিম হোসেন বলেন, মেট্রোরেল বাস সার্ভিসের আওতায় এই মুহূর্তে আমরা ৩০টি বাস প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের আগারগাঁও প্রান্তে ২০টি এবং উত্তরা দিয়াবাড়ি প্রান্ত ১০টি বাস রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
এমএমআই/এসএএইচ