ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দুই বিচারকের অপসারণ চেয়ে আইনজীবীদের আদালত বর্জন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
দুই বিচারকের অপসারণ চেয়ে আইনজীবীদের আদালত বর্জন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: দুই বিচারক ও এক নাজিরের অপসারণ চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালত তিনদিনের জন্য বর্জন করেছেন আইনজীবীরা।  তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রতিবাদ সমাবেশও পালন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। এ ছাড়া তারা জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

সমাবেশে বক্তারা জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বিকেলে মামলা দায়ের করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক সেটি গ্রহণ না করে জেলার সব আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর ও অপমানজনক মন্তব্য করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর সভা করে গত রোববার (১ জানুয়ারি) থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি।

একইসঙ্গে জাল স্ট্যাম্প, জালিয়াতির উৎস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেওয়ায় ঘুষখোর ও ঘুষখোরের মদদ দাতা আদালতের নাজির মোমিনুল হককে প্রত্যাহারের দাবি জানান আইনজীবীরা। কিন্তু মোমিনুল হককে রক্ষায় জেলা জজের ইন্ধনে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আইনজীবীদের বিরুদ্ধেই কর্মসূচি পালন করে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে আইনজীবীরা জেলা জজ শারমিন নিগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১’র বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল হকের অপসারণের দাবীতে আজ বৃহস্পতিবার, রবি ও সোমবার পর্যন্ত তিনদিন সব আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলেও তারা জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম লিটন, মাহবুবুল আলম খোকন প্রমুখ।

এদিকে, আদালত বর্জনের কারণে সকাল থেকে জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল আদালতসহ সবকটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সময় পার হয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১’র বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা নেননি। এ কারণে একজন বিচারককে আইনজীবীরা যেভাবে গালাগালসহ ও আচরণ করেছেন তা দুঃখজনক। এমন আচরণ আইনের পরিপন্থী। এছাড়া তিনি আইনজীবী কর্তৃক জেলা জজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। জেলা জজকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য সংবিধান পরিপন্থী।

উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বাক-বিতণ্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বিচারকের ওপর ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। পরে জেলা আইনজীবী সমিতি আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। তারা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন সভা করে বুধবার থেকে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় শত শত আইনজীবী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জেলা জজ শারমিন নিগারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।