ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করছে সরকার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করছে সরকার

ঢাকা: গত কয়েক বছরে মহাসড়ক এবং শহরের রাস্তায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে সরকার দেশে মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৮৯২ জন নিহত হয়েছে এবং ২০২১ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৪৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৮৪ জন নিহত হয়েছে।

 

বিআরটিএ-এর পরিচালক (নিরাপত্তা) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চলাচলের কারণে গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩ হাজারের নিচে। কিন্তু জাতীয় মহাসড়ক এবং শহরের রাস্তায় মোটরবাইক চলাচল বৃদ্ধির কারণে ২০১৯ সালে সংখ্যাটি ৪ হাজারের ঘর অতিক্রম করেছে। আমাদের কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনার আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু আমাদের তদন্ত অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। তাই বিআরটিএ মহাসড়কে মোটরবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই এ লক্ষ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছি। আমরা এটি মন্ত্রণালয়ে (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় খসড়া নীতির বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করবে এবং তারা এটি চূড়ান্ত করবে।

তিনি বলেন, নীতিমালায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দেওয়া হবে।

নিবিড়ভাবে মহাসড়ক মনিটরিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমরা এত নিবিড়ভাবে করতে পারি না, জনবলের অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা মনিটরিং করছি। কাজ চলছে।

মাহবুব-ই-রব্বানী উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের আওতায় সরকার মোটরবাইক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

গত ৭ জানুয়ারি, রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন (আরএসএফ) সড়ক দুর্ঘটনার ওপর তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে উল্লেখ করেছে যে, দেশে ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছে এবং এসব দুর্ঘটনায় ১২ হাজার ৬১৫ জন আহত হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ২ হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৯১ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৪০ দশমিক ০৭ শতাংশ।

ফাউন্ডেশনটি নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছাড়াও ২০১৯, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে এই চার বছরে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একই।

২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে মোট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির কারণে মোট দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।

২০১৯ সালে সংঘটিত ১১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মোট ৯৪৫ ব্যক্তি, ২০২০ সালে ১৩৮১টি দুর্ঘটনায় ১৪৬৩ ব্যক্তি, ২০২১ সালে ২০৭৮টি দুর্ঘটনায় ২২১৪ ব্যক্তি এবং ২০২২ সালে ২৯৭৩টি দুর্ঘটনায় ৩০৯১ ব্যক্তি প্রাণ হারায়।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ১৬.১৪ শতাংশ এবং  হতাহতের ঘটনা ৫৪.৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে এই দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০.৪৭ শতাংশ এবং হতাহতের ঘটনা বেড়েছে ৫১.৩৩ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এই দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩.০৭ শতাংশ এবং হতাহতের ঘটনা বেড়েছে ৩৯.৬১ শতাংশ।

২০২২ সালে সংঘটিত ২৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩০৯১ ব্যক্তি প্রাণ হারায় এবং ২১৫৪ ব্যক্তি আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৭৬.৪১ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।

অন্যন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল ২১.২৬ শতাংশ, মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২.২২ শতাংশ, ভারী যাবাহন মটর সাইকেলকে আঘাত করা ও ধাক্কা দেওয়ার ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪.৮৭ শতাংশ এবং ১.৬৫ শতাংশ ছিল অন্যান্য দুর্ঘটনা।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা এবং হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধির বহুবিধ কারণ রয়েছে। অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক বয়সে কিশোর কিংবা তরুণ কেবল এটাই সত্য নয়, তাদের মধ্যে জ্ঞানের অভাব এবং ট্রাাফিক আইন না মানার প্রবণতাও রয়েছে। তরুণরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায় ফলে নিজেরা যেমন দুর্ঘটনায় পতিত হয় তেমনি অন্যরাও দুর্ঘটনার শিকার হয়।

বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ও বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে।

এই দ্রুতগামী যানবাহনগুলোর অধিকাংশ চালক অদক্ষ ও অসুস্থ। বেপরোয়াভাবে তাদের গাড়ি চালানোর ফলে- যারা সাবধানে মোটরসাইকেল চালান, তারাও দুর্ঘটনার শিকার হন।

চার চাকার যানবাহনের চেয়ে মোটরসাইকেল ৩০ গুণ বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু দেশের দুর্বল (ফিটনেসবিহীন) গণপরিবহণগুলো সহজেই রাস্তায় নামতে পারে বিধায় এবং যানজটের কারণে-মানুষ যানজট এড়াতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। আর এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে।

মাহবুব-এ-রব্বানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকার ৩ ই (ইঞ্জিনিয়ারিং, এডুকেশন, এনফোর্সমেন্ট)-এর মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য শৌচাগার নির্মাণ, সড়কের উভয় পাশে ধীর গতির যানবাহনগুলোর জন্য পৃথক লেন নির্মাণ, ট্রাফিক সিগনাল স্থাপন ও সড়কে বিভিন্ন নির্দেশনা চিহ্ন আঁকা, দুর্ঘটনা প্রবণ স্থানগুলোতে রাম্বল স্ট্রিপ স্থাপনসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী- নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পরও বিগত ৫ বছরে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার ১৩৩ জন মারা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, কারো একক প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এর জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সূত্র: বাসস

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।