ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাঁদপুরে ৪৪ বছরের পুরোনো পাম্প, সেচ কার্যক্রম ব্যাহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
চাঁদপুরে ৪৪ বছরের পুরোনো পাম্প, সেচ কার্যক্রম ব্যাহত

চাঁদপুর: দেশের সেচ প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম একটি ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্প। চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ৬ উপজেলার প্রকল্পভুক্ত আবাদযোগ্য জমিতে সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাদির মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এটি বাস্তবায়ন হয়।

প্রকল্পভুক্ত ৫৩ হাজার হেক্টর এলাকা বন্যামুক্ত ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করে ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। ৪৪ বছর পার হলেও প্রকল্পের ১২০০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন চর-বাগাদী পাম্পিং প্লান্টের পাম্প মেশিনগুলো প্রতিস্থাপন হয়নি। বার্ষিক সংস্কার হলেও কর্মক্ষমতা অনেক কমে এসেছে। সেচ মৌসুমে চাহিদার আলোকে পাম্পগুলো পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সেচ কাজের পাম্পগুলো পরিবর্তন খুবই জরুরি মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।  

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন চর-বাগাদী পাম্পিং প্লান্টে গিয়ে দেখা যায় ৬টি পাম্পের মধ্যে ১টি পাম্প বন্ধ রয়েছে। বাকি ৫টি চলমান। যেগুলো চলছে সেগুলো বর্তমান মৌসুমে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা থাকলেও গড়ে ১৫ ঘণ্টা চালানো সম্ভব হয়। বাকি সময়ে বন্ধ করে রাখা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ৫৩ হাজার হেক্টর (গ্রস), ২৮ লাখ ৫শ হেক্টর চাষযোগ্য এবং ২২ হাজার হেক্টর সেচযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদন হয় ৩.৫৭ লাখ মেট্টিক টন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদিত ফসলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধান এবং আলু। সেচ খাল হিসেবে ডাকাতিয়া নদীর ৫৮ কিলোমিটার ব্যবহার হচ্ছে এই প্রকল্পে।

এই পাম্পিং প্লান্টের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরীফ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সেচ মৌসুম অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬টি পাম্পই এই চার মাস চালু রাখতে হয়। কিন্তু মেশিনগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় গড়ে ১৫ ঘণ্টা পরিচালনা করা সম্ভব। অর্থাৎ রাত ১০টায় চালু করলে বিকেল ৫টায় বন্ধ করে দিতে হয়। একই সঙ্গে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। মাত্র দুইজন অপারেটর দিয়ে চলছে বড় ধরনের এই প্লান্ট।

তিনি আরও বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্লান্টের ৬টি পাম্পের বাস্তব অবস্থা দেখার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, জানে আলম ও মামুন শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) এসেছেন। তারা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে চলে গেছেন। এছাড়াও মেশিনগুলো পরিচালনা করা কিংবা মেরামত করা যায় কিনা এ বিষয়টি যাচাই করার জন্য ভারতের তোসিমা পাম্প প্রাইভেট কোম্পানির সার্ভিস বিভাগের একজন প্রকৌশলী বর্তমানে প্লান্টে কাজ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, মূলত পান্টে যে পাম্প মেশিনগুলো শুরুতে বসানো হয়েছে সেগুলো ছিল জাপানি ইবারা করপোরেশনের। এসব পাম্পগুলো সাধারণত ২০-২৫ বছর কর্মক্ষমতা থাকে। কিন্তু এগুলোর বয়স এখন ৪৪ বছর। যে কারণে এসব মেশিনগুলো পরিবর্তন করে নতুন করে পাম্প মেশিন স্থাপন করার জন্য ১১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন করেন। কিন্তু টেন্ডার হয়নি। কারণ বর্তমান মেশিনগুলোই পরিচালনা করা সম্ভব এমন প্রশ্ন দেখা দিলে আবারও যাচাই বাছাই করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয় বুয়েট এবং ভারতীয় তোসিমা পাম্প কোম্পানিকে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা।

তিনি আরও বলেন, পাম্পের মেশিনগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যয় বেড়েছে। এখন প্রতিমাসে দুই কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। বুয়েট এবং ভারতীয় কোম্পানির সুপারিশের ভিত্তিতে প্লান্টের সংস্কার কিংবা প্রতিস্থাপন হবে। এখানে আমাদের কোনো মতামত নেই। তবে প্রকল্প এলাকার হাজার হাজার কৃষকের জন্য মেশিনগুলো সম্পূর্ণরূপে সচল রাখা একান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।