ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লেগুনার হেলপার থেকে গ্যাং লিডার!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
লেগুনার হেলপার থেকে গ্যাং লিডার!

ঢাকা: গত দুই বছর ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় আধিপত্যসহ চুরি, ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং (বিডিএসকে) গ্যাং। গ্যাং এর প্রধান শ্রীনাথ মণ্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় (২২)।

তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য।

হৃদয় স্থানীয় একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনার পাশাপাশি লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। টাকা দিলেই হৃদয় তার হয়েই কাজ করতেন। মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারিসহ আধিপত্য বিস্তার করে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন হৃদয়।

বিডিএসকে গ্রুপটি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।  

র‌্যাব জানায়, গত ২৮ জানুয়ারি রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, সদরঘাট ও ফরিদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ গ্রুপের লিডার হৃদয়সহ তার আট সহযোগীকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ আটক করেছে র‍্যাব।

আটকরা অন্যরা হলেন- বিডিএসকে গ্রুপের সমন্বয়ক মো. রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন (২০), মো. রাসেল ওরফে কালো রাসেল (২৫), মো. আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন (২১), মো. লোমান ঘাড় ত্যাড়া লোমান (২১), মো. আশিক ওরফে হিরো আশিক (১৯), মো. জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের (১৯) ও মো. সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন (২০)।

অভিযান চালিয়ে বিডিএসকে গ্রুপের মোহাম্মদপুর আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, একটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, চারটি চাকু (বড় ও ছোট), দুটি হাঁসুয়া, একটি কাঁচি এবং একটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজন ভুক্তভোগীকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনতাইকারীরা নিয়ে যান। পরে ওই ভুক্তভোগীকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। একইভাবে ওই এলাকার এক কলেজছাত্রের কাছ থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ ছিনিয়ে নেন। এসব ঘটনার তদন্তে নেমে র‍্যাব বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে।

তিনি আরও বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে ও জানতে পারে যে, বিডিএসকে গ্রুপের লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এরপর এ গ্রুপের সদস্যদের আটক করতে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা 'বিডিএসকে (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। এদের লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে গত দুই বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এর আগে গ্যাংয়ের সদস্যরা ‘সবুজ বাংলা গ্রুপ’, ‘টপ টেন গ্রুপ’ ও ‘ভাই বন্ধু গ্রুপ’ এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।  

এসব গ্রুপের সদস্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ মাদকের কারবার করতেন। এ গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত।

খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক আসামিরা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। আটক আসামিদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় গত দুই বছর ধরে 'বিডিএসকে (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)' গ্যাং এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। এ গ্রুপের সদস্যরা এর আগে ‘সবুজ বাংলা গ্রুপ’, ‘টপ টেন গ্রুপ’ ও ভাই ভাই গ্রুপের সদস্য ছিলেন। পরে তারা হিটার হৃদয়ের গ্রুপে এসে যুক্ত হন। আটক হৃদয় লেগুনা চালানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করতেন। তার নামে হত্যা মামলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাভোগও করেছেন।

তিনি বলেন, আটক রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন স্থানীয় একটি স্কুল থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। বিডিএসকে গ্যাংয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে তিনি হৃদয়ের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। এ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে অপরাধ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আদাবর এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কাজ করতেন তিনি। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া কয়েকবার কারাভোগও করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আটক রাসেল ওরফে কালো রাসেল ‘বিডিএসকে’ গ্যাংয়ের সদস্য। এ গ্যাংয়ের পাশাপাশি তিনি লেগুনা চালাতেন। তার নামেও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছয়টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর আগেও তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাভোগও করেছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন ও লোমান ওরফে ঘাড় ত্যাড়া লোমান 'বিডিএসকে' গ্যাংয়ের সদস্য। তারা আদাবর এলাকায় অটো রিকশাচালক ছিলেন। তাদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া আটক জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের স্থানীয় একটি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।

তিনি বলেন, আটক আশিক ওরফে হিরো আশিক ও সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন 'বিডিএসকে' গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। আশিক ও জোবায়ের মোহাম্মদপুর এলাকায় এক সঙ্গে রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। সুমন মোহাম্মদপুর ও বেড়িবাঁধসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি চালাতেন। তারা গত কয়েক বছর ধরে এ গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।