ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সীমান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার মিলনমেলা

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩
সীমান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার মিলনমেলা

বেনাপোল (যশোর): যশোরের বেনাপোল সীমান্তে প্রতিবছরের মতো এবারও দুই বাংলার বিভিন্ন আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।  

২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় সীমান্তের শূন্য রেখায় শত শত ভাষা প্রেমীদের উপস্থিতিতে কাঠ, বাঁশের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায় দুই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি। অন্যদিকে ভারতের পক্ষে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিধায়ক শ্রী বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি। এ সময় শূন্য রেখায় শত শত ভাষা প্রেমীদের উপস্থিতি মিলন মেলায় রূপ নেয়।  

‘সালাম, বরকত তোমাদের ভুলিনায়, বাংলা ভাষা অমর হোক’ স্লোগানে যশোরের বেনাপোল সীমান্তের শূন্য রেখা প্রকম্পিত হয়। শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ মিনার। নেই বিজিবি, বিএসএফের কড়া নজরদারি। কাটাতারের বেড়া ভুলে একাকার ভাষা প্রেমীরা। সাধারণ থেকে শুরু করে সীমান্তরক্ষী বিজিবি, বিএসএফ, পুলিশ পরস্পর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে।  

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্মরণীয় করতে দুদেশের তরুণরা করছে রক্তের বিনিময়। দুই বাংলা একসঙ্গে মিলিত হতে পেরে আনন্দে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ভাষা প্রেমীরা।

এদিকে সীমান্তে অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল।

২০০২ সালে প্রথম বেনাপোলের সরগম সংগীত একাডেমি ও ভারতের ২৪ পরগনার ২১ উদযাপন কমিটির আয়োজনে যৌথ মাতৃভাষা দিবস পালন শুরু হয় শূন্য রেখায়। আর ২০১২ সাল থেকে সরকারিভাবে এ দিবসটি পালন করছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বনগাঁ পৌরসভা।

কলকাতা থেকে ভাষার টানে সীমান্তে আসা ভাষা প্রেমী অরুন মণ্ডল বলেন, ২০০২ সাল থেকে ২১ উৎসব আয়োজনে তিনি সীমান্তে আসছেন। তবে ভাষাকে রক্ষা করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন প্রজন্ম শুদ্ধ বাংলা ভাষা উচ্চারণ ভুলে যাচ্ছে।  

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিধায়ক শ্রী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে সে ইতিহাস একমাত্র বাঙালির রয়েছে। এদিনে দুই বাংলা কাটাতারের ভেদাভেদ ভুলে এক হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইউছুপ আলী বলেন, দিন ভর দুই দেশের ভাষা প্রেমীরা রক্ত বিনিময় করেছেন। এতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আরও জোরদার হবে।

প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, যে আন্দোলনের মধ্যে সালাম, বরকতরা জীবন দিয়ে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছে। সে ইতিহাস পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকবে।

যশোর-১ আসনের সংসদ শেখ আফিল উদ্দীন বলেন, ভাষা শহীদদের স্মরণে আজকের এ আয়োজন। দুই বাংলার কয়েক হাজার মানুষ এ দিবসটি পালনে যোগ দিয়েছিল।
 
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভুইয়া বলেন, দুই দেশের বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তায় সীমান্তে  প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার ছিল।
 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আব্দুল হাকিম, জেলা প্রশাসক তাজিমুল ইসলাম খান, ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির জি-আর্টিলারি পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল, জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, বেনাপোল বন্দর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ন চন্দ্র পাল, নাভরন সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহিম খলিল।
 
ভারতের পক্ষে বিশেষ অতিথি ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বিধায়ক শ্রীমতি বীনা মণ্ডল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিধায়ক শ্রী বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ পৌরসভার প্রধান শ্রী গোপাল শেঠ, বনগাঁ লোক সভার সাবেক সংসদ সদস্য শ্রী মত্যা মমতা ঠাকুর, ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ শ্রী শ্যামল রায়, বনগাঁ পৌরসভার উপ পৌরমাতা শ্রীমতি জোৎস্না আঢ্য, গায়ঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রী গোবিন্দ দাস, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির দল নেতা শ্রী সৌমেন দত্ত ও ছয় ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শ্রী প্রসেনজিৎ ঘোষ।

এছাড়াও থাকছেন পশ্চিম বাংলা ও এপার বাংলার কবি, সাহিত্যিক ও আলোচিত সংগীত শিল্পীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।