ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সোমেশ্বরী নদীতে ভাঙন, ঝুঁকিতে সীমান্ত পিলারসহ ৫শ’ একর জমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
সোমেশ্বরী নদীতে ভাঙন, ঝুঁকিতে সীমান্ত পিলারসহ ৫শ’ একর জমি

নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলার সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় সীমান্তের ১১৫৬/৮-এস পিলারটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে। এতে দুর্গাপুরের ভবানীপুর এলাকার প্রায় ৫শ’ একর জমি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দুর্গাপুর উপজেলা। এখানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গারো পাহাড়। আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে নীলাভ জলরাশি।  


এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভ্রমণ পিপাসুদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে এ উপজেলা। স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও নেত্রকোনা জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, পর্যটকদের থাকা খাওয়ার জন্য অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না এখানে। তাই তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার দাবি জানালেও তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এর মধ্যে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  
   
দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান হৃদয় জানান, দুর্গাপুর থেকে ফারাংপাড়া হয়ে ভবানীপুর পর্যন্ত একটি মাটির রাস্তা ছিল। ভবানীপুর এলাকার অনেক বাড়িঘরসহ শত শত মিটার জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাহাড়ি খালের একটি ব্রিজ বিধ্বস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।  

স্থানীয় আব্দুস সাত্তারের অভিযোগ, রাস্তা ও ব্রিজ না থাকায় তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারেন না। ফলে ন্যায্যমূল্য পান না তারা।

স্কুলশিক্ষার্থী মো. জুয়েল মিয়া বলেন, রাস্তা ও ব্রিজ না থাকায় বর্ষাকালে তারা ঠিক মতো স্কুলে যেতে পারে না।  

স্বপন হাজং বলেন, আমরা খুবই নাজুক অবস্থায় আছি। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে কিংবা অন্তঃসত্ত্বাদের সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর।  

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জানান, সোমেশ্বরী নদী ভাঙনের কারণে ১১৫৬ নম্বর সীমান্ত পিলারটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভবানীপুর এলাকার বিজিবি’র একটি বিওপি রয়েছে। রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এ অঞ্চলের লোকজন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জোয়ানদের ভারতের সীমানা ঘেঁষে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পিলারটি নদীগর্ভে বিলীন হলে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে দুদেশের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে ভবানীপুর এলাকার প্রায় ৫শ’ একর জমি মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী বর্ষা আসার আগেই নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ী নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ও সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে প্রায় ১৫শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।  
    
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান জানান, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ফেব্রুয়ারি এলাকাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে প্রায় ১৫’শ মিটার রাস্তা নির্মাণের সম্ভাবতা যাচাই করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা, নকশা সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি সম্ভাবতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়ন করবে। উক্ত প্রকল্পে টাকা ছাড় পেলেই নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।  
     
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের পর যত দ্রুত সম্ভব, প্রকল্প প্রণয়ন এবং স্থায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।