ঢাকা: পাঠ্যবইয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের বিরুদ্ধে একটি সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল, নারী-পুরুষের সমতা বিরোধী মহল ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে যা জনসাধারণের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেছেন উপস্থিত বক্তারা। একইসঙ্গে শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ক অপপ্রচার বন্ধের দাবিও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বিজ্ঞান ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক, শিক্ষাপাঠ্যক্রম বিষয়ক অপপ্রচার বন্ধ হোক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা তুলে ধরেন।
গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
বক্তারা বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। শিশু-কিশোরীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং বিশ্বায়নের এই যুগে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের দুঃখ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে প্রস্তুত করা।
আলোচনা সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, জামায়াত, হেফাজত বা মৌলবাদীরা যখন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে তাণ্ডব করছে, আমাদেরও কি রাস্তায় নেমে তাণ্ডব করতে হবে? ২০১৩ সালে হেফাজত যে তাণ্ডব করেছিল ঢাকায়, আমরা একটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলাম। লাখ লাখ মানুষ এসেছে তোপের মুখে উড়ে গেছে। গণজাগরণ মঞ্চ, নির্মুল কমিটি সব উড়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকার সেটা বাধা দেয়নি। সরকার পারমিশন দিয়েছিল তাদের ঢাকা আসবার জন্যে। সরকারের অবস্থা হয়েছে ‘সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো’ এ রকম। দুটো বই তারা প্রত্যাহার করেছে এবং পরশুদিন দেখলাম হেফাজত প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মৌলবাদীরাতো তাদের কাজ করবেই। কিন্তু তাদের সাথে সমঝোতা করে আমাকে ইতিহাস পড়ানো বন্ধ করে দিতে হবে, বিজ্ঞান পড়ানো বন্ধ করে দিতে হবে, সামাজ বিজ্ঞান প্রত্যাহার করতে হবে, ইতিহাস প্রত্যাহার করতে হবে বই থেকে এটা কোন কাজের কথা না। সমঝোতা করে আমরা কতদূর যাবো।
রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, আমরা দেশটাকে কিভাবে পুরোপুরি উল্টো দিকে নিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ধর্মভীরু ধর্মান্ধ না। কারা তাদের এদিকে নিয়ে গেল? আমরাতো ২০১০ সালে ভালো একটা প্রাগ্রসর শিক্ষানীতি করেছিলাম। সেটাওতো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির দোসর তাদের উত্তরসূরীরা যারা বলে যে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গিয়েছিল, যারা নীলা নাগের বাড়ি দখল করে বসে আছে, তারাইতো। তাদেরকে আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই, কি জন্য দেই? তারা আজকে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে কি নিয়ে প্রশ্ন করছে। নীতি নির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন করছি এদের কাছে নতজানু হওয়ার প্রয়োজন ছিল কিনা?
সভায় সামাজিক কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াই ডাব্লিউ সিএ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
ইএসএস/এএটি