পাবনা (ঈশ্বরদী): সেই ব্রিটিশ আমলের কথা। ১৮৭৪ সালের দিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেলপথে নির্মিত করা হয়েছিল ২৬১ নাম্বার রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ।
ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেলরুটে গার্ডার ব্রিজটি ১৪৯ বছর পর সংস্কার করছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ।
ব্রিজটি নির্মাণ করার পর ট্রেন চলাচল করার মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর আগেই। বর্তমানে ব্রিজটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ২৮টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। শুধু ১৪টি ট্রেন ঢাকা অভিমুখে যায় এবং বাকি ১৪টি ট্রেন উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে মেইল, লোকাল, মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।
রেলওয়ের ওই গার্ডার ব্রিজটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি হওয়ায় চুন-সুড়কির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে বেডব্লক ও পিয়ারে ফাটল ধরে ব্রিজ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। ট্রেন উঠলেই কেঁপে ওঠে পুরো ব্রিজটি।
রোববার (১২ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেলরুটে রানীনগর-সান্তাহার রেল স্টেশনের মাঝে চলনবিলের রক্তদহবিলের মাঝে অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করার পরপরই ঢাকা অভিমুখী আন্তঃনগর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস পারাপার করা হয়।
এর আগে সিসিক্রিপের ওপর লোহার গার্ডার বসিয়ে বিকল্প অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করার পর ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়।
৫২ ফুট দৈর্ঘ্যের গার্ডার ব্রিজটির পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজ আগামী বর্ষা মৌসুম আসার আগে শেষ করবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ। ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি সংস্কার করা হচ্ছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রীজ) লিয়াকত শরীফ খান, সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজশাহী মোহাম্মদ আবু জাফর, সহকারী সেতু প্রকৌশলী (ব্রীজ) জুয়েল মিয়া, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) সান্তাহার আফজাল হোসেন, (কার্য) আব্দুর রহিম, (ব্রিজ) হাসান আলী (পাকশী) মিনহাজ আকন্দ পদ্মা ট্রেডিং এর ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম সুলতান।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেলরুটের ২৬১ নাম্বার ব্রিজটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়ায় বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, ব্রিটিশ আমলে মজবুত ব্রিজটি নির্মাণে সিমেন্টের ব্যবহারের প্রচলন না থাকায় সব গাঁথুনি করা হয় চুন-সুড়কির সাহায্যে ফলে তখনকার গার্ডার ব্রিজগুলো এখন আর মজবুত না। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনের গতি কমিয়ে চালানো হয়। তবে যেকোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, তাই ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো ব্রিজগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান বাংলানিউজকে জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ঝুঁকিপূর্ণ রেল ব্রিজগুলোকে যখন ডেডস্টপ ঘোষণা করা হয়, তখন সবগুলো যাত্রীবাহী ট্রেন কিন্তু ব্রিজ অতিক্রম করার সময় শূন্য কিলোমিটার গতিতে এসে থেমে যায়।
তিনি আরও জানান, আমরা কিন্তু শত বছর অতিক্রম করা পুরোনো রেলওয়ে ব্রিজগুলো পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ যেগুলো সেগুলো চিহ্নিত করেছি। জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেন ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ে রেল-যোগাযোগ বন্ধ না হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনা করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্রিটিশ আমলের পুরাতন সব ব্রিজ সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালে ট্রেন চালু হওয়ার পর ভারতের জলপাইগুঁড়ি, দার্জিলিং, শিয়ালদহে ট্রেন চলাচল করতো। সে সময় দার্জিলিং মেইল নামে একটি ট্রেন এ রুটে চলাচল করতো। ওই সময় ব্রিজটি নির্মাণ করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
আরএ