ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাস্থ্য খাতে নারী নেতৃত্বের বিস্ময়কর অবদান ও অর্জন উদযাপন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
স্বাস্থ্য খাতে নারী নেতৃত্বের বিস্ময়কর অবদান ও অর্জন উদযাপন

ঢাকা: আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্যসেবায় নারী চ্যাম্পিয়নদের কৃতিত্ব এবং বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবদান নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। দেশের স্বাস্থ্য খাতে নারী নেতৃত্বের বিস্ময়কর অবদান ও অর্জন উদযাপনের জন্য ইউএসএআইডির এইউএইচসি অ্যাকটিভিটি এবং সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

 

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর আমারি হোটেলের বল রুমে ‘উইমেন রাইজ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনাটি বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অ্যাডভান্সিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ উপস্থাপিত এবং কেমোনিক্স ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেটেডের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শায়লা পারভীন, ইউএসএআইডির এইউএইচসি প্রোজেক্ট ও প্যানেল মোডারেটরের চিফ অব পার্টি পারভেজ মোহাম্মদ আশেক, সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রুবিনা হামিদ, ইউএসএআইডি/জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি অফিসের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ (মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্য) ডা. ফারহানা আখতার, সাজিদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদা ফিজ্জা কবির, পালস ডিজিটাল হেলথ কেয়ারের সিইও ও ওরাকল বাংলাদেশ’র এমডি ও সিইও  রুবাবা দৌলা। এছাড়াও ইউএসএআইডি প্রতিনিধিসহ আরও বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যানিট্যারিয়ান এবং দাতা সংস্থা, প্রাইভেট ফাউন্ডেশন, স্টার্ট আপ এবং সূর্যের হাসি নেটয়ার্ক কর্মীরা আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।  

অনুষ্ঠানে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের পাঁচ ক্লিনিক ম্যানেজারকে সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট বিরতণ করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্লিনিক ম্যানেজাররা হলেন- রিক্তা রায়, রওশন আরা খানম, রেবেকা সুলতানা, আফসানা খাতুন ও সুলতানা বেগম।  

অধ্যাপক রুবিনা হামিদ বলেন, নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে সব ক্ষেত্রেই। আমরা প্রমাণ করেছি যে শুধু স্বাস্থ্যসেবা খাতে নয়, সব ক্ষেত্রেই আমরা আরও বেশি অবদান রাখতে পেরেছি। এটি নারীদের অবদান উদযাপন করার জন্য একটি সুন্দর সুযোগ। একইসঙ্গে এমন একটি দিন আসবে যখন আমরা পুরুষ দিবসও উদযাপন করব। সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের সব ক্লিনিক ম্যানেজাররাই প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন, তাদের অবদান, কার্যক্রম ও তাদের কৃতিত্বই এর উদাহরণ। বাংলাদেশের সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীদের ক্ষমতায়নে তাদের সেবা ও অবদানের জন্য তাদের শুভেচ্ছা জানাই।

শায়লা পারভীন বলেন, নারীরা খুব শক্তিশালী। আমরা যখন সুযোগ পাই এবং কোনো দায়িত্ব নেই সেটি আমরা ভালোভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। কাজের পাশাপাশি আমরা আমাদের সন্তানদেরও যত্ন নেই। আমরা পিছিয়ে নেই, বরং শুধুই সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নারীদের অবদান অপরিসীম যা শুধু সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কে নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবায় লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের হাসি ক্লিনিকের বেশিরভাগ কর্মী নারী এবং আমরা তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই।

ডা. ফারহানা আখতার বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর যখন নারী ও শিশুরা তাদের নিজ কমিউনিটিতে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে যা সবাইকে বেশ প্রভাবিত করেছে। দেশজুড়ে সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জোরদার ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি এবং এ নিয়ে আমি বেশ গর্বিত। অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা খাত ও এতে নারীর অবদানের জন্য আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে। ইউএসএআইডি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নানান কমিউনিটি, স্থানীয় এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে গড়ে তোলার জন্য একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে, যা একটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ বলে মনে করি।

জাহিদা ফিজ্জা কবির বলেন, আমি যে ঘরানার কাজের সঙ্গে জড়িত, সেখানে আমি কাজ করতে গিয়ে অনেক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী গ্রামে ঘুরে ঘুরে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবন প্রভাবিত করতে দেখেছি। মহিলা তত্ত্বাবধায়ক, কর্মী এবং নার্সরা বেশিরভাগই খুব নম্র এবং ন্যূনতম শিক্ষার সঙ্গে একটি ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে অথচ তারা অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে। একইসঙ্গে তারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে বেশ আত্মবিশ্বাসী। আমি জানি এ নিয়ে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই নারীরাই সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই অবদান প্রেরণা এবং উৎসাহ যোগায়।

রুবাবা দৌলা বলেন, নারী নেতৃবৃন্দের উন্নিত করার লক্ষ্যে যেই চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হতে হয় সেগুলর মধ্যে আমি প্রথমেই বলব আমাদের অচেতন পক্ষপাতিত্বের প্রবণতা নিয়ে। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারার ভিত্তিতে আমরা কেউই বিচার বা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এটি আমাদের কাজের গতি ও সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। ত্যাগের মন মানসিকতা থাকা তাই আবশ্যক। আপনি কখনই সব কিছু সমষ্ঠিগত ভাবে পাবেন না। কাজ ও জীবনের ভারসাম্য রেখেই নারীর পথ চলতে হবে। দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, সমান সুযোগ দিতে না পারার অপারগতা। চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি দেখি পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহনের পরিসংখ্যান কম তখন চাওয়া সত্বেও সম-সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করার সম্ভাবপর হয়ে ওঠে না। তাই মেয়েদেরকে ছোট থেকেই এই নিয়মের অধিনে থাকার শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। তারা যেনো পিছিয়ে না থাকে বরং সমানতালে সব বিষয়ে যোগদান করে সেটি সুনিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। তৃতীয়ত, নারীদের নেটওয়ার্কিং করতে হবে, আমরা যেভাবে পুরুষদের নেটওয়ার্কিং করতে দেখি, একইভাবে নারীদেরও নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখার প্রবণতা থাকতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এমআইএইচ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।