ঢাকা: রাজধানীর কালশী সড়কের মোড় থেকে লালমাটিয়া টেম্পুস্ট্যান্ডের ১২০ ফুট সড়ক দখল হয়ে আছে। সড়কটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী ও পথচারীরা।
বুধবার (২২ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ওপর একটি পাকা ঘর তুলে সেখানে আন্তঃজেলা ট্রাক সমিতির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১২০ ফুট সড়কজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে বহুসংখ্যক ট্রাক। সড়কটির বাকি অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হয় যানজট।
এছাড়াও সড়কটিতে রয়েছে একটি পাবলিক টয়লেট। বিভিন্ন ট্রাক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এই পাবলিক টয়লেট। যে কারণে সাধারণ জনগণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না পাবলিক টয়লেটটি।
জানা গেছে, একটি সিন্ডিকেট এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে অবৈধ এই ট্রাকস্ট্যান্ডটি। প্রতি মাসে এই স্ট্যান্ড থেকে ওঠে কয়েক লাখ টাকা।
স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কাউন্সিলর তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে স্ট্যান্ডটির মাসোহারা তোলেন। এই সমিতির অধীনে রাখতে হলে প্রতিটি ট্রাককে ভর্তি ফি বাবদ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং মাসে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা করে দিতে হয়। বর্তমানে এই সমিতির অধীনে প্রায় ২০০ ট্রাক রয়েছে। যা থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সমিতিটি।
পথচারী রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিনিয়তই এখান দিয়ে যাতায়াত করি। কখনো রিকশায়, কখনো মোটরসাইকেলে। কালশীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও বদলায়নি কালশী মোড় থেকে লালমাটিয়া টেম্পুস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি। এই মোড়ে অবৈধভাবে বসেছে ট্রাকস্ট্যান্ড। আমি এখানে সিটি করপোরেশনকে কখনোই উচ্ছেদ অভিযান চালাতে দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন কালশী ফ্লাইওভার। উদ্বোধনের আগের দিন এখান থেকে ট্রাক উধাও হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পর থেকেই এখানে আসতে শুরু করল ট্রাকগুলো। প্রশাসনের সঙ্গে এভাবেই চলছে ট্রাক মালিকদের কানামাছি খেলা!
স্থায়ী বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন (ছদ্মনাম) অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকা উন্নত হলেও কালশী মোড়ের সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত দখল হয়ে আছে। সন্ধ্যার পরে এই সড়কটি অনেক সংকীর্ণ হয়ে যায়। বিকেল হলেই এই সড়কে বসতে শুরু করে হরেক রকমের দোকান। সাধারণ জনগণ ও এলাকাবাসী স্বাচ্ছন্দে হাঁটাচলাও করতে পারেনা।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই সড়কটি প্রতিদিন ব্যবহার করছে প্রায় ১১-১২ হাজার মানুষ। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের নাম ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে চাঁদা। যার কাছ থেকে যেভাবে যতটুকু পারছে, চাঁদা তুলছে। এলাকার কয়েকজন নেতা মাসোহারা পায়। তাই স্ট্যান্ড সরাতে কারো কোনো উদ্যোগ নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নুর সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-২) মো. জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের জন্য কয়েকবার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে বলা হয়েছে। হেডকোয়ার্টার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে উচ্ছেদ করব।
অবৈধ এই ট্রাকস্ট্যান্ডটি স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশনায় চলছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তাই বলতেও পারছি না। হেডকোয়ার্টার নির্দেশনা দিলেই ট্রাকস্ট্যান্ডে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা পারভেজ ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি এই এলাকায় আসার আগেই কালশী মোড়ে বসেছে ট্রাকস্ট্যান্ড। তবে স্ট্যান্ড নিয়ে আমার কাছে কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে নাই।
তিনি আরও বলেন, উড়াল সড়ক উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন। তখন ট্রাকগুলো এখান থেকে সরানো হয়েছিল। এখানে সড়কটি ভাঙ্গা। আমার মনে হয়, সড়ক সংস্কার হলে ট্রাকগুলো চলে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
এমএমআই/এনএস