ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিজার করতে গিয়ে কেটে ফেলা হলো অন্তঃসত্ত্বার জরায়ু!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
সিজার করতে গিয়ে কেটে ফেলা হলো অন্তঃসত্ত্বার জরায়ু! হাসপাতালের বেডে সেই অন্তঃসত্ত্বা।

ফরিদপুর: ফরিদপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল করে অন্তঃসত্ত্বার জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ উঠছে স্থানীয় মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।  

ওই নারীর নাম রিক্তা (২২)।

তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের মোহনমিয়া নতুনহাট এলাকার মো. রুবেল মোল্যার স্ত্রী।  

জানা যায়, শুক্রবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রসব বেদনা নিয়ে ফরিদপুর শহরে অবস্থিত মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই অন্তঃসত্ত্বাকে। পরে রাতে তড়িঘড়ি করে সিজার করানোর জন্য তাকে ওটিতে নেওয়া হয়। সিজার করার সময় ওই অন্তঃসত্ত্বার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনার পর চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলেও ওই প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় রোগীর স্বজনদের মধ্যে আহাজারি শুরু হয়।  

ওই প্রসূতির শ্বশুর মো. রফিক মোল্যা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, শুক্রবার (২৫ মার্চ) আমার ছেলের বউয়ের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। সন্ধ্যায় আমার ছেলের বউকে নার্স ও আয়ারা বাচ্চা প্রসব করাতে নেয় ওটিতে। কিছুক্ষণ পর এসে বলে রোগীর অবস্থা ভালো না। জরুরি সিজার করতে হবে। ৩০ মিনিট পরে বলে বাচ্চা এবং দুইজনের অবস্থাই খারাপ। বাচ্চা বাঁচলেও মা বাঁচবে না এবং মাকে বাঁচালে বাচ্চা বাঁচবে না। তখন মহাবিপদে পড়ে যাই আমরা। এরপর নার্সরা এসে বলে পেট কেটে বাচ্চা বের করলে কারোই সমস্যা হবে না, জরুরি রক্ত লাগবে বলে অনাপত্তিপত্রে সই করতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পরে আমাদের জানানো হয় বউমার পুরো জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা ইফতারির সময় ডাক্তার না থাকার কারণে নার্স এবং আয়ারা মিলে সিজার করিয়েছে। সে কারণে আমার ছেলের বউয়ের সারাজীবনের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন ডাক্তার দিয়েই এ সিজার করানো হয়েছে, নার্স কিংবা আয়া দিয়ে নয়।

শ্বশুর রফিক মোল্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন ডা. কল্যাণ কুমার সাহা ও ডা. মো. জাহাঙ্গীর এ সিজার করেছেন। আমরা এ সিজারের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।  

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ডা. কল্যাণ কুমার সাহা ও ডা. মো. জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

রিক্তার স্বজনরা জানান, দেড় বছর আগে রফিক মোল্যার ছেলে রুবেল মোল্যার সঙ্গে বিয়ে হয় রিক্তার। রুবেল কৃষিকাজ করেন। এটি তার প্রথম সন্তান। জরায়ু হারিয়ে রিক্তা এখন মরণ যন্ত্রায় হাসপাতালের বেডে ছটফট করছে। এ পর্যন্ত চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। আরও রক্ত দেওয়া লাগবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।  

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।  

তবে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহ মোহাম্মাদ বদরুদ্দোজা বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ওই পরিবার আমাদের লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।  

তিনি আরও বলেন, সিভিল সার্জন স্যার ঢাকায় একটি ট্রেনিংয়ে আছেন। স্যার ঢাকা থেকে এলে বিষয়টি স্যারকে জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।