ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে মৎস্য অফিসারকে ভাই ডাকায় ক্ষেপলেন সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
সিলেটে মৎস্য অফিসারকে ভাই ডাকায় ক্ষেপলেন সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা

সিলেট: সিলেটের গোলাপগঞ্জে মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হাসানকে ভাই ডাকায় ক্ষেপে গেলেন উপ-সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আ স ম মিজানুর রহমান। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

 

জানা গেছে, দুপুরে সাংবাদিক ফাহিম আহমদ একটি কাজে মৎস্য অফিসে যান। এ সময় মৎস্য অফিসার হাসিবুর রহমানকে না পেয়ে ফাহিম আহমদ উপ-সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে বলেন, মৎস্য অফিসার হাসিবুল হাসান ভাই কোথায় আছেন? জিজ্ঞেস করতেই ভাই ডাকায় ক্ষেপে যান মিজানুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, একজন বিসিএস ক্যাডারকে কীভাবে ডাকতে হয় আপনি জানেন না? 

এ সময় সাংবাদিক ফাহিম আহমদের সঙ্গে থাকা আব্দুল আজিজ ও জাহিদ উদ্দিন কী ডাকতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিশারি অফিসারকে কী ডাকবেন। এরপর মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।  

এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমি অফিসিয়াল কাজে বিয়ানিবাজারে ছিলাম। ভাই ডাকা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে অফিসে সবার সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেব।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি এমন কোনো কথা বলিনি যে আমাকে ট্রল করে দিতে হবে। তারা (সাংবাদিকরা) এসে বলেছেন, ভাই আছেন কিনা, আমি জানতে চাই কোন ভাই, বলেন ফিশারি অফিসার ভাই। তখন বলেছি, ‍উনি বিসিএস অফিসার, একটু শালীনভাবে বলেন। তবে ভাই বলতে হবে, এটা বলিনি। কারণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন সেটাওতো আমি জানি। এ ঘটনার বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ডেকে পাঠান। আমি উনাকে যা ঘটেছে বলেছি। কিন্তু এ কথা বলার পরে আমাকে নিয়ে ট্রলের শিকার হচ্ছি। আমার দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার নেই।  

তিনি বলেন, ভাই ডাকা কী অশালীন বা বিসিএস ক্যাডার কোনো অফিসারকে কী ভাই ডাকা নিষেধ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।  

এ ব্যাপারে সাংবাদিক ফাহিম আহমদ জানান, মৎস্য অফিসে গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাকে না দেখে উপ-সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে বলি, ভাই কোথায়? এ কথা বলতেই তিনি ক্ষেপে যান৷ বলেন, ভাই কেন বলছেন। বিষয়টির পর সঙ্গে থাকা আরও দুজন সহকর্মী সাংবাদিকও এর প্রতিবাদ জানান। উনারা আমাদের সঙ্গে যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সাধারণ জনগণের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করছেন তা জানা নেই।  

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এর আগে ‘স্যার না বলায়’ রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ক্ষুব্ধ আচরণ করেছেন- এমন অভিযোগ তুলেছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও শুরু করেছিলেন। অবশ্য ডিসি চিত্রলেখা নাজনীন সেদিন দুঃখ প্রকাশ করে ওই ঘটনার ইতি টানলেও ফেসবুকে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘স্যার’ ডাকা না- ডাকা নিয়ে এখনো চলছে তুমুল আলোচনা। এ অবস্থায় শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তাদের স্যার বা ম্যাডাম ডাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভদ্রতার খাতিরে অনেকে স্যার বা ম্যাডাম ডাকেন। কিন্তু এটি ডাকা বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কেউ যদি আপা বা ভাই ডাকেন, তাতে দোষের কিছু নেই। এতে মাইন্ড করারও কিছুই নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা জনগণের সেবক- এ চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। যেখানে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এ সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। ’

এ ঘটনা নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় ওঠেছে। তখন ফের আগুনে ঘি ডাললেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার উপ- সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আ স ম মিজানুর রহমান।  

বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩ 
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।