পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করায় নির্দোষ এক নারীকে কারাদণ্ড দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করা হয়। তবে ইউএনও দাবি করেন, সরকারি খাস জমিতেই নির্মাণ কাজ চলছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন কারো জমি দখল করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুস সালাম দাবি করেন, ভুক্তভোগী মো. আব্দুল কাদের মুন্সী (৯৯), আব্দুল রশিদ মৃধা (৬০), আবদুস সালাম (৫৫), মো. শহিদ মুন্সি (৪০), হাছিনা বেগমসহ (৫০) আরও ১৪ জন বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি স্থানীয় ছত্রকান্দা মৌজা জেল নম্বর-০৬, এস এ খতিয়ান নম্বর ৫৯, দাগ নম্বর- ৪৩২, জমি ৫৩ শতাংশ। একই মৌজায় ২৬২ নম্বর খতিয়ানের ৪৩২/৮৪৫ নম্বর দাগের জমি ২০ শতাংশ জমির মোট ৭৩ শতাংশ জমির সীমানা দেওয়া আছে এবং এগুলো তাদের ভোগ দখলে রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি সরকারের অবাসন প্রকল্প তৈরির জন্য তাদের ব্যক্তি মালিকানধীন জমি দখল করে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ভোগ দখলে থাকা বসতবাড়ি পৈত্রিক সম্পত্তির রেইনট্রি, চাম্বুল, মেহগনিসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ কেটে বিক্রি করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ লাখ টাকা।
এ ঘটনায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪০/২০২৩। আদালত মামলার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বাউফল সহকারী জজ আদালত সাতদিনের মধ্যে বিবাদীদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিবাদীরা আদালতের আদেশ অমান্য করে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির গাছ-পালা কেটে বিক্রি করলে পুনরায় গত ২ মার্চ আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পরও ইউএনও জোর করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী হাসিনা বেগম বলেন, আমাদের পৈত্রিক জমি অবৈধভাবে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দখল করার প্রতিবাদ করায় ইউএনও আমাকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করে তিন মাসের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠান। ২৯ মার্চ আদালত আমাকে বেকসুর খালাস দেন। বর্তমানে আমাদের সম্পত্তিতে জোর করে ঘর তোলা হচ্ছে। আমরা আমাদের ন্যায্য জমি চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আব্দুল রশিদ মৃধা বলেন, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার নিজেও জানে যে জমির মালিক আমরা আর পাশের জমি সরকারি। এরপরও তারা আমাদের জমি দখল করে কাজ করছে। যেহেতু পাশে পুকুর আছে, সেটা ভরাট করতে তাদের বেশি খরচ হবে। এ কারণে আমাদের ভরাট করা জমিতে তারা ঘর নির্মাণ করছে।
এ ছাড়া সার্ভেয়ার কামরুল হাসান এবং ভূমি অফিসের তহসিলদার বাপ্পি বিষয়টি সমাধান করার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে টাকা দাবি করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন রশিদ মৃধা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-আমিন বলেন, সরকারি জমিতে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ঘর তৈরি করা হচ্ছে না। আর আদালত যেই জমিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, সেখানে আমরা কাজ করছি না।
হাসিনা বেগমকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, সরকারি কাজে বাধাদানের আপরাধে তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৩
এসআই