ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশের বিশেষ শাখায় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের উদ্বোধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
পুলিশের বিশেষ শাখায় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের উদ্বোধন

ঢাকা: কর্মজীবী নারীদের শিশু সন্তানদের সুরক্ষায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কার্যালয়ে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগে এসবি প্রধান কার্যালয়ে এই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধন শেষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে দেশের শিশুরা শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত থাকবে। জাতিসংঘ শিশু সনদ ঘোষণার ১৫ বছর আগেই ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

শিশুরা যাতে মুক্তমনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেছিলেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি বিনামূল্যে বই বিতরণ চালু করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এ দেশে সব শিশুদের উন্নয়নের পথ রুদ্ধ হয়। কিন্তু জাতির জনকের পথ অনুসরণ করে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এক লাখ ২৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেছিলেন। শিশুদের সুরক্ষায় বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা করেছেন। বর্তমানে ১২ লাখ ৫৪ হাজার মাকে মা ও শিশু সহায়তা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ১২২টি ডে-কেয়ার সেন্টার ও ১০টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় কর্মজীবী নারী হোস্টেল ও ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে যৌথ পরিবারের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে আর একক পরিবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে কর্মজীবী নারীরা দিনের বেলা অফিসে ব্যস্ত থাকছেন। তাদের বাড়ির বাইরে থাকার কারণে শিশুদের যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এ কারণে অনেক নারীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন না।

এসব চিন্তাভাবনা করেই শেখ হাসিনা কর্মজীবী নারীদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেছেন। এর ফলে নারীরা নিশ্চিন্তে অফিসে কাজ করতে পারছেন, সন্তানরাও নিরাপদে থাকতে পারছে। এতে তাদের শিশুদের স্বাস্থ্যেরও সুরক্ষা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়নে রোল মডেল মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারীরা অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ করছে। বিভিন্ন বাহিনী, এমনকি জাতিসংঘের শান্তিমিশনেও সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ দেশের নারীরা বেশি সুযোগ চায়না, তারা পুরুষের সমান সুযোগ চায়। বঙ্গবন্ধু শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে রাষ্ট্রের নারীরা সমান যোগ্যতা নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীরা অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও বেশি যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে, যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

এসবি-র এই ডে কেয়ার সেন্টারটির মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের অফিসাররা সুরক্ষিত থাকবেন। তাদের সন্তানদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে এবং নিরাপদে থাকবে। এর ফলে পুলিশ মহিলা কর্মকর্তারা নিশ্চিতে কাজ করতে পারবেন। এমন একটি মহতি কাজের জন্য এসবির সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ডে কেয়ার সেন্টারটির সফলতা কামনা করছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন শিশুদের স্নেহ করতেন, শিশুদের যাতে শৈশব বিনষ্ট না হয়, তাদেরকে কায়িক শ্রমে নিয়োজিত না করা হয়। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শিশুদের অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষায় আইন করা হয়েছে। শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের জন্যও আলাদা আইন করেছে সরকার। যাতে সেখানে শিশুরা যথাযথ যত্নে লালন-পালন করা হয়।

তিনি বলেন, শিশুদের প্রতি যারা সংবেদনশীল, তাদের দিয়েই বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে এ ধরনের প্রজেক্ট সাজানো হয়েছে। এখন নানা স্থানে সরকারি ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তাই সেসব ভবনে যদি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের জন্য সেসব ডিপার্টমেন্টকে যুক্ত করা যায়, যাতে ভবনগুলোতে এমন একটা পরিকল্পনা রাখেন। তাহলে এ প্রক্রিয়াটি আরও সুন্দর হবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশ সদস্যরা নিজে বিপদসংকুল পরিবেশে কাজ করে। এরমধ্যে সন্তানকেও এমন পরিস্থিতিতে বাসায় রেখে দিলে তিনি কাজটা ঠিকমতো করতে পারেন না। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সব নাগরিককে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদের বিকাশ স্বাভাবিক রাখতে এই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের উদ্যোগ। এটিকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে, যাতে স্ট্যান্ডার্ডটা ধরে রাখা সম্ভব হয়। তদারকি করলে পরিবর্তন বা পরিমার্জন সম্ভব হবে।

এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ এসবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
পিএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।