ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মুলাদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আরও একজনের মরদেহ মিলল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
মুলাদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আরও একজনের মরদেহ মিলল

বরিশাল: বরিশালের মুলাদী উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় আলমগীর কবিরাজ (৫০) নামে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  এ নিয়ে এ ঘটনায় দুইজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ভোরে মুলাদী উপজেলার শফিপুরে একটি বিল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আলমগীর মুলাদীর সফিপুর ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার জলিল কবিরাজের ছেলে।

মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (ঢামকে) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কুমার মন্ডল।

এ ঘটনায় এর আগে মুলাদীর বাটামারা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব তয়কা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বেপারী ছেলে হেলাল বেপারীর (৪০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।


উভয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের মহল্লাদার আবু বক্কর খান। তিনি জানান, নিজ বাড়ির পেছনের একটি বিল থেকে আলমগীরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আলমগীর সফিপুরের কবিরাজ গ্রুপের সদস্য।  আর নিহত হেলাল বাটামারার আকন গ্রুপের সদস্য।

সফিপুরের কবিরাজ গ্রুপের সঙ্গে আকন গ্রুপের সক্ষতা রয়েছে, এরা দুই গ্রুপ মিলে একটি পক্ষ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান সরদার জানান, আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় বাটামারা ও সফিপুরের কবিরাজ, আকন, হাওলাদার ও হাজী গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।   তবে এ চারটি গ্রুপ আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত। যারমধ্যে কবিরাজ ও আকন গ্রুপ মিলে একটি পক্ষ আর হাওলাদার ও হাজী গ্রুপ মিলে অপর আরেকটি পক্ষ।

তিনি জানান, দাদন হাওলাদারের ভাই আনিছ হাওলাদার কয়েক বছর আগে খুন হন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর দীর্ঘ কয়েক বছর এলাকা ছাড়া ছিলেন হেলাল বেপারী ও কামাল বেপারী। ১০ থেকে ১৫ দিন আগে তারা নিজ এলাকায় ফেরেন। আর সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে দাদন হাওলাদারের পক্ষে কিছু লোক হেলমেট পরে ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে গৌরনদীর টরকি হয়ে এলাকায় আসে।   শুনেছি এলাকায় আসার আগে পুলিশের সহায়তাও চেয়েছিল তারা। আর এলাকায় আসার পরেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়।  পরে হেলাল বেপারী ও আলমগীর কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর হেলাল বেপারীর ভাই এখনও কামাল বেপারী নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও সকালে স্বজনরা জানিয়েছেন কামাল বেপারী গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হলেও জীবিত রয়েছে। কোনো হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনার আগ থেকেই থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। পুলিশ সদস্যরা আকন গ্রুপের কয়েকজনকে আটক করে জাগরনী এলাকায় নিয়ে গেছে। আর এর কিছুক্ষণ পরই কিছু লোক এসে বেপারী বাড়িতে ঢুকে তখন তিনজনকে তারা ধরে নিয়ে যায়, এর মধ্যে রাতেই হেলালের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত হেলালের স্বজনরা জানান, পূর্ব বিরোধের জের ধরে সাত বছর পর গত একমাস আগে বাড়িতে ফেরেন হেলাল ও কামাল।   এরপর কয়েকবার হাজী গ্রুপকে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা তাতে রাজি না হয়ে প্রতিশোধ নিতে চায়। তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিচারও দাবি করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগমের স্বামী আলী হোসেন জানান, হাজী গ্রুপের আনিস নামে একজন নিহত হয়। এরপর থেকে এলাকা ছাড়া অনেকে।  সর্বশেষ হাজী গ্রুপের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলম বেপারীসহ কয়েকজন এলাকায় আসতে চায়।

আলম বেপারী এলাকায় আসার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগোযোগ করেছেন বলে জানিয়ে আলী বলেন, সোমবার (১০ এপ্রিল) ৩০ থেকে ৩৫ জন দুটি ট্রলারে করে স্থানীয় বাজারে আসে। তখন পুলিশ সদস্যরা সেখানে ছিল। পরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো শুরু করে। এ সময় আকন গ্রুপের সদস্য হেলালকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।

আলী অভিযোগ করেন, তার বাড়ির সামনেও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ সময় তার স্ত্রী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়।

এ বিষয়ে বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) ওয়াহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মুলাদী উপজেলার বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নে দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় একটি গ্রুপ এলাকার বাইরে থাকলেও রোজায় এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাতে হেলাল নামে একজনের এবং ভোরে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ  ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।

পুলিশকে পরিস্থিতি শান্ত করতে ফাঁকাগুলি ছুড়তে হয় জানিয়ে এসপি ওয়াহিদুল বলেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রয়েছেন, আর এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এসপি ওয়াহিদুল আরও বলেন, ওই এলাকায় আমাদের পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে, আর সংঘষের ঘটনা শোনার পর ওসি নিজেও সেখানে যান। তবে পুলিশের কারও পক্ষ হয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে বাস্তবতা কি সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।