ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা হিসেবে দুইকোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে ব্যবসায়ীদের চৌকি বিছিয়ে অস্থায়ী ব্যবসা পরিচালনা কর্যক্রমের উদ্বোধন শেষে এ ঘোষণা দেন ডিএসসিসির মেয়র ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ সময় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তাপস বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। গতকাল আমাদের সিটি করপোরেশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারের আগুনে আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে৷ ভয়াবহ এই আগুন পুরোপুরি নিভতে প্রায় তিনদিন সময় লেগেছে। গত সোমবার আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছি৷ তালিকা অনুযায়ী আগুনে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷
মেয়র তাপস বলেন, রোববার (৯ এপ্রিল) আমরা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ঈদের আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে নতুন করে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং তাদের যেনো পুর্নবাসন করা যায়৷ সেই লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সোমবার ভোর থেকে পোড়া স্তূপ সরানোর কাজ শুরু করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা কয়েক হাজার মে. টন আগুনে পুড়ে যাওয়া বর্জ্য পরিষ্কার করেছি। ইতোমধ্যে আমরা সেখানে ইটের সোলিং বিছিয়ে দিয়েছি৷
মেয়র বলেন, আমরা অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও স্থির করেছিলাম যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেনো আবার ব্যবসায় ফিরে আসতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। আজ বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে।
এ সময় বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা একে অপরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এটাই হলো বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় ঐক্যের জায়গা।
শেখ ফজলে নূর তাপস আরও বলেন, ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা চাইনা এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর ঘটুক। পাশাপাশি এ ধরনের দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে যাতে সহজে দাঁড়ানো যায় সেজন্য একটি নীতিমালা করা হয়েছে।
ঢাকা- ৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, গত ৪ এপ্রিল আগুনের লেলিহান শিখা বঙ্গবাজারসহ এ অঞ্চরটি পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল। ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে এখানকার ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও তাদের কাজ শুরু করেছেন। এসব ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গা থেকে তহবিল আসছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রমাণ করেছেন, কাজ করলে কাজ করা যায়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে বঙ্গবাজারের এই পোড়া স্তূপ পরিষ্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিকভাবে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি খেয়াল রাখছেন। বিপদ মানুষকে পথ দেখিয়ে দেয়। আমি মনে করি বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের বিপদ আজকে পথ দেখিয়ে দেবে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভানোর ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরি ও তিনটি আংশিক। মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট।
এ ঘটনায় ডিএসসিসির পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে মোট ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরমধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২ হাজার ৯৬১ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এসসি/জেডএ