ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

একপাশে আগুন নেভানোর যুদ্ধ, অন্যপাশে ঈদের শপিংয়ে ব্যস্ত ক্রেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৩
একপাশে আগুন নেভানোর যুদ্ধ, অন্যপাশে ঈদের শপিংয়ে ব্যস্ত ক্রেতারা

ঢাকা: রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৬ ঘণ্টা পরও এখনও পুরোপুরি নেভেনি আগুন। আগুন নির্বাপণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

বর্তমানে বাহিনীটির ১২টি ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ করছে। তাদের সহযোগিতা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্বেচ্চাসেবী সংগঠনগুলো। এ যেন এক যুদ্ধ। এর ভেতরেই নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে চলছে হরদম বেচাকেনা। ঈদের শপিংয়ে ব্যস্ত ক্রেতারা।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। অন্ধকার ঢাকতে আনা হয়েছে বাহিনীটির ৩টি লাইট ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মার্কেটের ছাদ ফুটো করে পানি ছিটাচ্ছেন মার্কেটের ভেতরে। কোথাও যেন আগুন না থাকে এজন্য একটি একটি করে দোকান পরীক্ষা করছেন তারা। অগ্নিকাণ্ডের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে নিউমার্কেটসহ পার্শ্ববর্তী চারটি মার্কেট। সবগুলো মার্কেটেই ঝুলছে তালা।

কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখা গেছে, নিউমার্কেটের উল্টো পাশের মার্কেটগুলোতে। ঈদ উপলক্ষে করা আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্স, গাউছিয়া মার্কেট, হকার্স মার্কেট, নূরজাহান মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলোয়।

ঈদের এ সময় ক্রেতাদের যেমন চাপ থাকার কথা তেমন না থাকলেও একেবারে ফাঁকা নেই মার্কেটগুলো। বরং অসংখ্য ক্রেতা ঈদের শপিং করতে ভিড় জমাচ্ছেন সেগুলোয়।

স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের শপিং করতে হকার্স মার্কেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজুল হাসান। আজকে এ পরিস্থিতির মধ্যে কেনাকাটা করতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী। আজকে বন্ধ ছিল তাই এ পরিস্থিতির মধ্যেই এসেছি। কারণ ঈদের আগে আর সময় পাব না।

তিনি বলেন, নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু তাই বলে তো দুনিয়া থেমে নেই। দোকানও বন্ধ নেই। দুনিয়া তার আপন গতিতে চলবে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে আরেক ক্রেতা বলেন, মানুষ মারা গেলেও পরেরদিন ঈদ উদযাপিত হবে। সেটা তো আর কেউ বন্ধ রাখবে না। ঈদের আগে আজকেই সুযোগ পেয়েছি শপিং করতে আসার, তাই এসেছি।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, দোকান খুললেও অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্রেতা নেই। রাস্তা বন্ধ থাকায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না।

নূরজাহান মার্কেটে ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি করে তাওহিদ গার্মেন্টস। দোকানটির মালিক রেজাউল করিম বলেন, নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের কারণে তেমন ক্রেতা নেই। ঈদের আগে এ সময় ক্রেতার চাপে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যেত না। আজ একেবারেই ক্রেতা নেই। কারণ এ এলাকার রাস্তগুলো বন্ধ থাকায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না।

হকার্স মার্কেটের শাড়ি কুঠিরের শাড়ি বিক্রেতা মো. জামাল বলেন, দোকান খুলেছি ঠিকই কিন্তু বেচাকেনা নেই। সকাল থেকে বসে থেকে এখনও খরচের টাকাও উঠেনি। আগুনে আমাদেরই পরিচিতদের দোকান পুড়েছে, তাই বলে তো আমরা দোকান বন্ধ করে বসে থাকলে হবে না। দোকানে বসে আমরা তাদের কথাই ভাবছি।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী মো. দেলোয়ার বলেন, গতকাল আমাদের ব্যস্ততা ছিল। আজ নেই। এট কিছু করার নেই। এটা তো দুর্ঘটনা। আমরা সতর্ক আছি যাতে কোনো দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল রেজাউল করিম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আগুন এখনও পুরোপুরি নির্বাপণ করা যায়নি। আমাদের ১২টি ইউনিট এখনও কাজ করছে। তবে এখন আর বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আমরা করছি না।

এর আগে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। ৫টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের টিম পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে পর্যায়ক্রমে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি, বিমান-নৌ-সেনা বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বাভাবিকসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৩
এসসি/আরবি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।