ঢাকা: পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন অনেক মানুষ। ঠিক এই সময়ে একটু বাড়তি আয়ের আশায় ঢাকাতেই থেকে গেছেন রিকশা চালকদের একাংশ।
রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন রিকশাচালক কামাল। বয়স ৫০ এরও বেশি। ওয়্যারলেস এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকা কামালের বাড়ি ময়মনসিংহে।
ঈদের সবাই যখন রঙ-বেরঙের নতুন জামা-কাপড় পরে রাস্তায় বের হচ্ছেন, তখন কামালের গায়ে পুরোনো জীর্ণ শার্ট। চারপাশের উৎসব আনন্দ ছাপিয়ে তার চোখে মুখে ফুটে উঠছে হতাশা ও ক্লান্তি। ঈদের সময় বাড়তি আয়ের আশায় ঢাকায় থেকে গেলেও মিলছে না আশানুরূপ যাত্রী। তাইতো শ্রমজীবী এই মানুষটির মনে নেই ঈদের কোনো আনন্দ।
কামালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। আছে দুই মেয়ে, তবে তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।
ঈদে বাড়ি যাননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ি গেলে খরচের টাকা লাগবে। স্ত্রী-সন্তানের জন্য কিছু নেওয়া লাগবে। কিন্তু সেই টাকা এখনো উঠাতে পারিনি। তাই মনের কষ্টে বাড়ি যাইনি। ভেবেছিলাম ঈদের এই কয়দিন রিকশা চালিয়ে কিছু বাড়তি টাকা জমিয়ে তারপর বাড়ি যাব। কিন্তু গরমের কারণে বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারি না।
কামালের মতোই বাড়তি আয়ের আশায় বাড়ি যাননি সাইফুল ইসলাম। তার বাড়িও ময়মনসিংহে।
তিনি বলেন, বাড়িতে ঘর তোলার জন্য ঋণ করছিলাম। মাসের শেষে কিস্তির টাকা দিতে হবে। তাই ঈদে বাড়ি না গিয়ে ঢাকায় থেকে গেছি। ঈদে দুই তিন-দিন রিকশা চালিয়ে তারপর বাড়ি যাব।
হাতিরঝিলের মধুবাগ অংশে কথা হয় রিকশাচালক মো. মঞ্জুর সঙ্গে। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে। তিনি বলেন, ঈদের সময় রাস্তা ফাঁকা থাকে। ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়। তাই কষ্ট হলেও ঈদের সময় বাড়িতে না গিয়ে ঢাকায় আছি।
ঈদের সময় বেশি আয় হয়, তাই দুইদিন আগে নওগাঁ থেকে ঢাকায় এসেছেন রায়হান। তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদের সময় ঢাকায় এসে রিকশা চালাই। ১৫-২০ দিন রিকশা চালিয়ে টাকা জমিয়ে বাড়ি চলে যাই।
পরিবার ছাড়া ঈদ করতে খারাপ লাগে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খারাপ তো লাগেই। কিন্তু এই কয়দিন রিকশা চালালেই ভালো আয় হয়, তাই খারাপ লাগলেও আসি। আর এই কষ্ট তো পরিবারের জন্যই করি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৩
এসসি/এমএইচএস