ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের রাজসিক বিদায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের রাজসিক বিদায় বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের রাজসিক বিদায় । ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: বঙ্গভবনে রাজসিক বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে। ৫২ বছরের ইতিহাসে আবদুল হামিদের আগে দেশে ২০ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করলেও তাদের কেউ কার্যত আনুষ্ঠানিক বিদায় পাননি।

নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পর সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয় আবদুল হামিদকে।  

বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার শপথ নেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ নেওয়ার পরপরই নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব তুলে দেন মো. আবদুল হামিদ।

দুপুর ১টার পর শুরু হয় সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

বিদায় বেলায় আবদুল হামিদকে প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল মাঠে গার্ড অব অনার দেয়।

গার্ড অব অনারের পর পুষ্পসজ্জিত খোলা জিপে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বক ফোয়ারা থেকে বঙ্গভবনের প্রধান ফটক পর্যন্ত যান।

এ সময় বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা দুই ভাগ হয়ে ফুল সজ্জিত খোলা জিপের সামনে লাল কাপড়ে মোড়ানো রশি ধরে সামনে এগিয়ে যান, পেছনে পেছনে যায় আবদুল হামিদের গাড়ি। গাড়ি থেকে হাত নেড়ে সবাইকে বিদায় জানান আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম।

এ সময় বঙ্গভবনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিজিআর সদস্যরা পুষ্পবৃষ্টিতে রাষ্ট্রপতিকে বিদায়ী সম্মান জানান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এ বিদায়ী সংবর্ধনায় অংশ নেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ব্যান্ড দল এবং অশ্বারোহী দল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি স্মরণীয় ঘটনা। ৫২ বছরে আর কোনো রাষ্ট্রপতির বঙ্গভবনে এ রকম বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি।

পরে বঙ্গভবনের প্রধান ফটক থেকে মোটর শোভাযাত্রা যোগে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে তার নিকুঞ্জের বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়।

নিকুঞ্জের বাড়ি প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

আবদুল হামিদ বলেন, তিনি দেশের মানুষের কাছে, এলাকার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মোটামুটি স্বাধীনভাবে’ কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেজন্য তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞ সাংবাদিকদের কাছে, কারণ তার বক্তব্য তারা ‘টুইস্ট না করে’ জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

আবদুল হামিদ বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলাম। তবুও আমি সবসময় নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ মনে করি। আমার যে রাজনীতি, তা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য।

তিনি বলেন, চেষ্টা করেছি দেশে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে, আগামীতেও চেষ্টা থাকবে। দেশের মানুষ সব দিক থেকে ভালো থাকুক, সুখী থাকুক সেটি চাই।

আবদুল হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির চেয়ারে ছিলেন।

সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার পরিবার নিয়ে নাগরিক জীবনে আবারও গণমানুষের কাতারে শামিল হলেন।

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার পিতার নাম মরহুম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।

হাওরের জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মো. আবদুল হামিদ ‘ভাটির শার্দূল’ নামে খ্যাত। রসরসিকতা এবং সাদামাটা জীবনযাপনের জন্যও তার বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে।

বৈচিত্রময় বর্ণাঢ্য জীবনে ৮০ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য, আইনজীবী, ছাত্র নেতা ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
এমইউএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।