ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বোয়ালমারীর ইউএনও-মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আদালতের শোকজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
বোয়ালমারীর ইউএনও-মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আদালতের শোকজ মোশারেফ হোসাইন

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে শোকজ করেছেন আদালত। ‘বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়নীতি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী’ কাজ করার অভিযোগে তাদের এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আদালত।

সিনিয়র সহকারী জজ বীনা দাস গত ১৬ এপ্রিল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। ২৪ এপ্রিল আদালতের এ আদেশ হাতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ওই দুই কর্মকর্তাকে জবাব দিতে সময়সীমা বেধে দিয়েছেন আদালত।  

এর আগে ১২ এপ্রিল উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের বামনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা বাদী হয়ে চারজনকে বিবাদী করে মামলাটি করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

মামলার বিবাদীরা হলেন- ইউএনও মোশারেফ হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও অগ্রণী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখার ম্যানেজার।

মামলার এজাহারে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা অভিযোগ করেন, তিনিসহ ১২ জন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান শেখের মতবিরোধ দেখা দেয়।  

এছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকমতো হিসাব না দেওয়া, সভা না ডাকা, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাজনৈতিক বিভাজনসহ বিধিবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে সিনিয়র শিক্ষক আবু সাইদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ বিদ্যালয়ের ২০ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতার প্রাপ্য ৪ লাখ ৮ হাজার ২২ টাকা স্যালারি শিট প্রস্তুত করে অগ্রণী ব্যাংকে জমা দেন।  

কিন্তু ব্যাংক অজানা কারণে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়নি। অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার জানান, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তাঁকে নিষেধ করায় তিনি টাকা দেননি। তবে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়াই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের বিল ছেড়ে দেন। এ ব্যাপারে ব্যাংক থেকে জানানো হয় ইউএনওর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতনের টাকা দেওয়া হয়েছে।

ইউএনওর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ সদস্য পদত্যাগ করায় বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের ২৮ মার্চের ১৭ দশমিক ১০ ধারা অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটির অবর্তমানে নিম্ন স্বাক্ষরকারী (ইউএনও) বেতন বিলে স্বাক্ষর করে ব্যাংকে পাঠানো এবং পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হলো।

তবে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আটজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন, এই কথা সত্য নয়। বর্তমান কমিটি বাতিল হয়নি কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভেঙেও দেয়নি। এছাড়া কোনো অ্যাডহক কমিটিও গঠন করা হয়নি। ইউএনও বেতন বিলে যে স্বাক্ষর করেছেন তা এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি। ইউএনওর এই কার্যক্রম বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়নীতি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মানিক মজুমদার বলেন, '১৬ এপ্রিল এ মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত ১ ও ২ নম্বর বিবাদী যথাক্রমে ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। '

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ২৪ এপ্রিল আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে লিখিত জবাব দেব। '

জানতে চাইলে বোয়ালমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, ‘আদালতের শোকজের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে আদালতকে লিখিত জবাব দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।