ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শতকরা ১৮ জন প্রশিক্ষিত হলেই নিরাপদ এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব: ফায়ার ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২৩
শতকরা ১৮ জন প্রশিক্ষিত হলেই নিরাপদ এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব: ফায়ার ডিজি ছবি- মুজিবুর রহমান

ঢাকা: ব্যক্তিগতভাবে আমরা সচেতন হলে অগ্নি দুর্ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে একটি গাইডলাইন দেওয়া আছে।

১০০ জনে ১৮ জন অগ্নি নির্বাপনে প্রশিক্ষিত হলে নিরাপদ স্থান, ভবন বা এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব। যে বিল্ডিং তৈরি করা হোক না কেন, হয় বসবাস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। অথবা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবন যিনিই ব্যবহার করেন না কেন, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় একটু সচেতন হলেই অগ্নি ঝুঁকি থেকে আমরা বাঁচতে পারবো।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়।  

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, আমরা যখন একটি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করি, তখন যদি সেঈ প্রতিষ্ঠানে ১০০ টাকা খরচ করি, সেখান থেকে আমি ২ টাকা অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করি, তাহলে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া যায় যে আমরা নিরাপদে থাকবো। এভাবেই আমরা এই সমাজ, এই দেশকে নিরাপদ করতে পারব।

অগ্নি দুর্ঘটনার সমস্যার কথা উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অনেকগুলো সমস্যা আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অগ্নি দুর্ঘটনার স্থল বা এলাকায় অতিরিক্ত ও অযাচিত লোকজনের উপস্থিতি। উৎসুক জনতার কারণে আমাদের কাজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়। আরেকটি কারণ হচ্ছে- পানির উৎস। ঢাকা শহরে পুকুরের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি।

ফায়ার স্টেশনের কথা উল্লেখ করে ডিজি বলেন, ২০০৮ সালে এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ফায়ার স্টেশন ছিল ২০৪টি। আজকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলায় ন্যুনতম পক্ষে ফায়ার স্টেশন হতে হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ফায়ার স্টেশন হবে ৭৩৫টি। শিল্পাঞ্চলে আমরা আরও বেশি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করতে যাচ্ছি।  

ফায়ার সার্ভিসের সরঞ্জামের বিষয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস একটি সক্ষম প্রশিক্ষিত বাহিনী। আমাদের ৯৫ পার্সেন্ট ইকুইপমেন্ট আছে। সরঞ্জামাদি ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিং- এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা বাড়বে ও পরিবর্তন হবে, এটাই স্বাভাবিক।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আমাদের অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ে আতঙ্ক আছে, কিন্তু সচেতনতা নেই। নেই তেমন কোনো সরকারি-বেসরকারি সঠিক উদ্যোগ। ঢাকা শহরের ৯৮ শতাংশ বিপণি বিতানে অগ্নি ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নেই। কোনো রকম নিয়ম নীতি না মেনেই গড়ে উঠেছে উপানুষ্ঠানিক মার্কেটগুলো। কিছু কিছু মার্কেটে লোক দেখানো ফায়ার এস্টিংগুইশার, পানি রিজার্ভ ট্যাংক, বালুর বালতি, রেসকিউ সিঁড়ি থাকলেও বড় কোনো অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়।  

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন নেওয়া হয়েছে। ছোটখাট কোনো ভূমিকম্প অথবা অন্য যেকোনো দুর্ঘটনায় মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া অপরিকল্পিত এসব বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন এই শহরকে ভয়াবহ অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে।  

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ২০১০ সালের প্রস্তাবিত বিল্ডিং কোড ১৩ বছর পর পাশ হয়েছে, ২০২২ সালে। ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত আরও বেশ কিছু উৎকর্ষ ঘটেছে। কাজেই বর্তমান বিল্ডিং কোড সময়োপযোগী নয়, এটি আধুনিকায়ন জরুরি। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক ভবন মালিকদের উদাসীনতা, সচেতনতার অভাব, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতার ঘাটতিসহ নানা কারণে দেশে আগুন লাগার ঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না।  

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঈদের পরের দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাতাসে গ্যাসের গন্ধ নগরবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে। ঈদের ছুটিতে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় ঢাকায় গ্যাসের প্রেশার বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস লাইনে ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে এই গ্যাস বের হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গ্যাস লাইনের বিপজ্জনক এসব ছিদ্র শাপে বর হয়েছে। অতিরিক্ত চাপে ছিদ্র দিয়ে এ গ্যাস বের হতে না পারলে যে কোনো সময় পাইপ লাইনে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারতো। দ্রুত গ্যাসের চাপ কমিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এই ঘটনা আমাদের জানান দেয় যে, আমরা শহরবাসী কী ভয়াবহ অগ্নি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। তাই তাজরিন ফ্যাশন, নিমতলী, চুরিহাট্টা, হাসেম ফুড, বিএম কন্টেইনার, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে ভবন ব্যবহারকারী ও সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

এসময় অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।  

এর মধ্যে পাঁচটি সুপারিশ হলো: 
১) আগুন লাগা প্রতিরোধসহ যে কোনো ধরণের দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে, বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে একটি রোড ম্যাপ তৈরি করা।  

২) ২০১০ সালের প্রস্তাবিত বিল্ডিং কোড ১৩ বছর পর পাশ হয়েছে, ২০২২ সালে। ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত আরও বেশ উৎকর্ষ ঘটেছে। তাই বর্তমান বিল্ডিং কোড সময়োপযোগী করে আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়া।  

৩) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর বিরুদ্ধে শুধু নোটিশ নয়, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া।  

৪) অগ্নি নির্বাপক সংস্থাগুলোর বিদ্যমান কাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক ফায়ার ইঞ্জিন, ওয়াটার হাইড্রেন্ট, উন্নত অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জাম সরবরাহ করা।  

৫) রাজউক কর্তৃক ভবন ব্যবহারের সনদ না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন সংযোগ না দেওয়া ইত্যাদি।

ভবন ব্যবহারকারীদের অসচেতনতাই অগ্নি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ- শীর্ষক এই ছায়া সংসদে সরকারি দল প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি এবং বিরোধী দল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিতার্কিকরা অংশ নেয়। বিতর্কে জয়ী হয় প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা।

প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোরছালীন বাবলা, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস ও সাংবাদিক ফারাবী হাফিজ।  

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২৩
এমএমআই/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।