বগুড়া: বগুড়ার সদর উপজেলায় প্রধান ডাকঘরের নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্যকে (৪৩) হত্যা করে ভল্ট ভেঙে আট লাখ টাকা লুটের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম (৪০) নামে এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৪ মে) দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার শফিকুল নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার পশ্চিম করমডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। তার নামে ২০১৯ সালে ঢাকার বনানী জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে ডাকাতি করার মামলাসহ নয়টি মামলা চলমান। এসব মামলার অধিকাংশই ডাকাতি ও লুণ্ঠনের অভিযোগে দায়ের করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, গ্রেপ্তার শফিকুল খুবই চতুর ও সাহসী। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তিনি বগুড়ার ডাকঘরে ডাকাতি করেন। এজন্য গত মার্চ মাস থেকে চার দফা নওগাঁ থেকে তিনি বগুড়ায় আসেন। গত ১২ মার্চ তিনি প্রথম বগুড়ায় পৌঁছে ডাকঘরের অবস্থান ভালোভাবে রেকি করেন। প্রতিষ্ঠানের ভল্ট কক্ষ, সিসি ক্যামেরা, প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য করে ফিরে যান। এরপর ১৫ মার্চ পুনরায় তিনি বগুড়ায় পৌঁছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো কেনাকাটা করেন। বগুড়া সদর থানার পেছনে অবস্থিত বাবু হার্ডওয়্যার নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি গ্রিল ও ভল্ট কাটার যন্ত্রপাতি কেনেন। এরপর গত ২০ এপ্রিল ডাকাতির উদ্দেশ্যে রাত ১০টার দিকে বগুড়ায় পৌঁছে রাতভর ডাকঘরের আশপাশে অবস্থান করে রাত ৩টার দিকে প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে ও পরের দিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি পোস্ট অফিসের ভেতরেই অবস্থান করেন। এ সময় তিনি সিসিটিভি ক্যামেরার লাইন কেটে দেওয়া এবং ভল্টের দরজার একাংশ কেটে ফেলার কাজ করেন। পরে সন্ধ্যায় তিনি কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে বাড়ি যান। ঈদের পরের দিন ২৪ এপ্রিল তিনি পুনরায় বগুড়ায় পৌঁছে রাত ২টার দিকে ডাকঘরের উত্তর পাশের প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকেন। এদিনই মূলত তার উপস্থিতি টের পান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত। এ সময় প্রশান্তের সঙ্গে শফিকুলের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে প্রশান্তের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেন শফিকুল। পরে তার একটি হাত বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর আগের কেটে রাখা ভল্টের অংশ দিয়ে একটি রডের সাহায্যে টাকার র্যাক টেনে এনে আট লাখ টাকা নিয়ে সকাল ৭টার দিকে বেরিয়ে যান। প্রশান্ত শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া হিন্দুপাড়া এলাকার প্রাণকৃষ্ণ আচার্য্যের ছেলে।
পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ এ ঘটনার খবর পেয়ে ডাকঘরে গিয়ে যেসব আলামত উদ্ধার করে তার মধ্যেই ছিল কিউআর কোড সম্বলিত শান মেশিনের প্যাকেট। এছাড়া ডাকঘরের সিসিটিভি কামেরা অকেজো করার আগের কিছু চিত্র তাদের হাতে আসে। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত চালিয়ে শনাক্ত করা হয় আসামিকে। এরপর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যাকাণ্ডসহ টাকা লুটের বিষয়টি স্বীকার করেন। বগুড়ায় ডাকাতি করা অর্থের সিংহভাগ নওগাঁর দুটি ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল জানিয়েছেন, শুধু দেশেই নয়, ভারতে গিয়েও কয়েক দফা ডাকাতি করেন তিনি। এরমধ্যে একবার ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে সেখানে জেলেও আটক ছিলেন শফিকুল। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২৩
কেইউএ/আরআইএস