ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনার যেখানে ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়... (ভিডিওসহ)

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
খুলনার যেখানে ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়... (ভিডিওসহ)

খুলনা: পুকুর-দীঘি-জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় খুলনা শহরের শিশু-কিশোররা সাঁতার শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবদ অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাঁতার শেখার সুযোগ দিতে পারছিলেন না।

অবশেষে দু’হাত মেলে সাঁতারের সুযোগ তৈরি হয়েছে এই বিভাগীয় শহরে।

মহানগরের সোনাডাঙ্গায় খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে শহরের একমাত্র সুইমিংপুলটি চালু হওয়ায় ভীষণ খুশি নগরবাসী। রেজাউল সুইমিং একাডেমির পরিচালক জিএম রেজাউল ইসলামের উদ্যোগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পুলটি আবারও সচল হয়েছে। সম্প্রতি পুলটি চালু হওয়ায় প্রতিদিন মনোরম পরিবেশে সাঁতার শিখছেন অনেকে। রেজাউল ইসলাম খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সদস্য ।

জানা যায়, ২০১৩ সালের আগস্টে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় যাত্রা শুরু হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আওতাধীন খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের। এরপর সেখানে নির্মাণ করা হয় খুলনার একমাত্র সরকারি পূর্ণাঙ্গ সুইমিংপুল।

২০১৮ সালে পুলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় পুলটি। এরপর আর চালু করা হয়নি। ফলে পুলের পানি শোধণাগার, সরবরাহ পাম্পসহ প্রায় সবকিছুই অকেজো হয়ে যায়। খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে। তবে পুলটি চালানোর মতো এতদিন তেমন কেউ ছিল না। যে কারণে অন্য সব খেলায় খুলনা জাতীয় পর্যায়ে দাপটের সঙ্গে অংশগ্রহণ ও পুরস্কার পেলেও সাঁতারের ক্ষেত্রে ছিল সব জেলার পেছনে। খুলনা থেকে উঠে আসছিল না জাতীয় পর্যায়ের কোনো সাঁতারু।

শুক্রবার (৫ মে) রেজাউল সুইমিং একাডেমির পরিচালক জিএম রেজাউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সুইমিংপুলের পাম্প নষ্ট ছিল, পুলের বেসিনে অনেক জায়গায় টাইলস উঠে গেছিল। গ্যালারি আর চেঞ্জরুম জরাজীর্ণ ছিল। অযত্ন আর অবহেলার পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল সুইমিংপুলটি। বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে ব্যাথিত করত। খুলনা থেকে জাতীয় পর্যায়ের সাঁতারু তৈরি করা ও খুলনার শিশু কিশোরদের সাঁতার শেখানোর জন্য আমি পুলটি চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে ধন্যবাদ জানাই ক্রীড়াবান্ধব  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে খুলনাবাসীর সাঁতার শিখতে সুইমিংপুল তৈরি করার জন্য। দীর্ঘদিন এটা বন্ধ ছিল। যাদের সহযোগিতায় এটা পুনরায় চালু করতে পেরেছি তাদের নাম না নিলে অকৃতজ্ঞ হয়ে যাব। চালু করার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার , অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের খুলনার উপ-পরিচালক, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ক্রীড়া সচিবসহ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। ১২ বছর ধরে আমি বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সদস্য। খুলনাবাসীর সাঁতার শেখার জন্য কোনো জায়গা নেই। সেই কথা চিন্তা করে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সুইমিংপুলটি চালু করতে পেরেছি। এ কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন ও সাহস জুগিয়েছে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।

কারা এখানে সাঁতার শিখতে পারবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই এখানে সাঁতার শিখতে পারবে। তবে শিশু ও মেয়েরা বেশি অগ্রাধিকার পাবে। তারপর অন্যরা সুযোগ পাবে। আমার এখানে ২জন সাঁতারের প্রশিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থী বাড়লে প্রশিক্ষক আরও আনা হবে।

সুইমিংপুলে আসা খুলনার বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আরমান হোসেন মিলন বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তর শহর হলেও এখানে কোনো সুইমিংপুল ছিল না। যারা সুইমিংপুলটি চালু করেছেন তাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে জিএম রেজাউল ইসলামকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমি সবাইকে সাঁতার শেখার এ সুযোগটি লুফে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।  

সাঁতার শিখতে আসা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনিজা হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় মেয়েদের সাঁতার শেখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু রেজাউল সুইমিং একাডেমির পরিচালক জিএম রেজাউল ইসলামের কারণে সে সুযোগ তৈরি হয়েছে। এজন্য তাকেসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।

প্রশিক্ষণার্থী সারা রহমান বলেন, আমি খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এতদিন সাঁতার শেখার কোনো সুযোগ পাইনি। যে কারণে সাঁতার শেখা হয়নি। কিন্তু এবার এখানে এসে সাঁতার শিখতে পারছি। খুলনার মেয়েদের উচিত এখানে এসে সাঁতার শেখা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় নামি দামি কয়েকটি হোটেলে সুইমিংপুল আছে। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের সাঁতার শেখার কোনো সুযোগ ছিল না। খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সুইমিংপুলটি আবার চালু হওয়ায় শিশু কিশোররা সাঁতার শেখার সুযোগ পাচ্ছে। সুস্থ জীবনের জন্য শরীরচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দেহ-মন-ও মস্তিষ্ককে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখতে শরীর চর্চার বিকল্প নেই। আর সাঁতার হলো সেই শরীরচর্চার মধ্যে সবচেয়ে সেরা চর্চা। তাই স্বাস্থ্য সচেতন সবাইকে সাঁতার শেখা উচিত।

ভিডিও দেখুন: 

যেভাবে যাবেন: খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে খুলনার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে ৫০০ গত দূরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উত্তর পাশে খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সুইমিংপুলের অবস্থান।

প্রশিক্ষণ ফি: প্রথম মাসে ২ হাজার। দ্বিতীয় মাসে ১৫০০ টাকা, প্রতি ঘণ্টা ১৫০ টাকা, ভর্তি ফরম ১০০ টাকা।

সাঁতার প্রশিক্ষণের সময় সূচি: সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা (১ ঘণ্টা করে), দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা (১ ঘণ্টা করে), বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা (১ ঘণ্টা করে)। সপ্তাহের রবি ও সোমবার সাঁতার প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকে। মহিলা প্রশিক্ষক দ্বারা মহিলাদের সাঁতার শেখানো হয়। যোগাযোগ : ০১৭১১৩৬৫৩০৪

বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৩
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।