ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছেন জেহাদী’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
‘এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছেন জেহাদী’ নিহত দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা ও হত্যামামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জেহাদী (বাঁ থেকে)

‘আমার মিশন একটাই- নোমান-রাকিবের হত্যাকারীদের বিচার। এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছে জেহাদী।

তিন দশক তিনি এলাকায় রাজত্ব করে যাচ্ছেন। এ অঞ্চলে আবুল কাশেম জেহাদীর পদচারণা যেন আর না পড়ে, তার স্থান যেন না হয়। ’

লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরের পোদ্দার বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে জেলা ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের সঙ্গে নিহত যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেন।  

শুক্রবার (৫ মে) রাতে ঢাকায় বশিকপুরের ভাই ভাই মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির আয়োজনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে ও শোক সভার আয়োজন হয়।  

এ হত্যামামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জেহাদী। তিনি  চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও এখনবধি জেহাদীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রতিবাদ সভায় জেহাদীর প্রশ্রয়দাতাদেরও হুঁশিয়ার দেন নোমানের ভাই ও মামলার বাদী মাহফুজুর রহমান।

মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নোমান যেমন আমার ভাই, রাকিবও তেমন আমার ভাই। রাকিব সবসময় আমার সঙ্গে থাকতো। ঘটনার কয়েক মিনিট আগে নোমান-রাকিব আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যায়। এরপরই ঘটনা শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি আমার ভাইকে জড়িয়ে ধরে আছি, সাইফুল তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে আছে। এ সময় আর কেউ এগিয়ে আসেনি। ’

এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নোমান আমার মাথার উপর ছায়ার মতো ছিল। তাকে আমি হারিয়েছি। তবে এ এলাকার মানুষ এখন আমার পাশে আছে। সে জন্য আমি শক্তি পাচ্ছি। এ ইউনিয়নের নোমান-রাকিবের রক্ত ঝরেছে। আর যাতে কারো রক্ত না ঝরে। সেজন্য বশিকপুরের জন্য যতটুকু করার করবো, আপনারাও (এলাকাবাসী) করবেন। ’

হত্যা মামলাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট বলে জানান মামলার এই বাদী।  

প্রতিবাদ সভায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল ইসলাম রুবেল বলেন,  ‘আমার ভাইয়ের বুকে এতগুলো গুলি লেগেছে, আমার ভাইকে বাঁচানোর জন্য চতুর্দিকে চিৎকার দিয়েছি, হাহাকার করেছি। একটা মানুষও এগিয়ে আসেনি। আমার ভাইয়ের মৃত্যুযন্ত্রণা, আহাজারি আমি দেখেছি। সহ্য করতে পারিনি। ’

ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে সাইফুল বলেন, ‘এলাকার মানুষ কেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ভয়ে প্রতিবাদ করে না? আবুল কাশেম জেহাদীকে কেন ভয় পেতে হবে? আমার ভাইকে কেন মৃত্যুবরণ করতে হবে?’

আবুল কাশেম জেহাদীকে দলীয় পদ (চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি) থেকে বহিষ্কার চান তিনি।  

সাইফুল বলেন, ‘বার বার কাশেম জেহাদী সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে যাচ্ছে। কেন একজন সন্ত্রাসীকে বার বার এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করা হলো? তাকে শুধু সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হতো। ১৯৯৬ সাল থেকে এ অঞ্চলে ২৪টি খুন হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন কাশেম জেহাদীর বিরুদ্ধে একটি স্মারকলিপি দেয়। সেটা নিয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব, আমার ভাইয়ের খুনের বিচারের জন্য। ’ 

উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরের পোদ্দার বাজারে গত ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম।  

এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীকে প্রধান আসামি করে আরও ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন >> নোমান-রাকিব হত্যা: ৫ গ্রুপে ভাগ হয়ে যায় হত্যাকারীরা

জেহাদীর মদদেই নোমান-রাকিবকে হত্যা 

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।