ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

'পৌর প্রাণ' রক্ষা ও সুপেয় পানির দাবি

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
'পৌর প্রাণ' রক্ষা ও সুপেয় পানির দাবি

পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘সুপেয় পানি পান করব, সুস্থ শরীর রাখব, পানির দেশে পানি নেই, সুপেয় পানির ব্যবস্থা চাই, নদী-পুকুর জলাশয়-দূষণকারীদের রক্ষা নয়'-এ স্লোগান নিয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় 'পৌর প্রাণ' রক্ষায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের আয়োজনে শনিবার (২০ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় পাথরঘাটা পৌর শহরের জীবন রক্ষাকারী ও প্রাণখ্যাত রিজার্ভ পুকুর পাড়ে ৫ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

 

এছাড়াও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, সিসিডিবি, বিডিক্লিন, এনএসএস, সংগ্রাম, প্রত্যয়, পাথরঘাটা যুব রেডক্রিসেন্ট, পাথরঘাটা এনসিটিএফ, পাথরঘাটা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথরঘাটা আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনে অংশ নেয়।

পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিন সোহেল, সহ সভাপতি জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরগুনা সমন্বয়ক আরিফুর রহমান, প্রত্যয়ের সভাপতি মেহেদী শিকদার, সিসিডিবির সুব্রত কুমার মিস্ত্রী, প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক কানিজ ফাতিমা বীনা, নাসির উদ্দিন প্রিন্স ও কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন।

বক্তারা বলেন, পাথরঘাটা পৌর শহরের এই পুকুরটি হলো পাথরঘাটা পৌরবাসীর প্রাণ। পানির অপর নাম জীবন, ঠিক তেমনি এই পুকুরটি হলো আমাদের প্রাণ। এই পুকুরের পানি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের প্রাণের চাহিদা মিটায়। কিন্তু এখানে কিছু অসাধু লোকের কারণে পুকুরটি দীর্ঘ বছর ধরে অরক্ষিত রয়েছে পাশাপাশি অন্তত অর্ধশত পাইপ দিয়ে অবৈধভাবে পানি নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় পুকুরের চারপাশ ভরাট করে দখল করেছে অসাধুরা। এ বিষয় পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।

এসময় বক্তব্য দেন কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন এবং কানিজ ফাতিমা বীনা। তারা বলেন, তিন দিনের মধ্যে পাইপসহ অবৈধ‌ স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে নাহলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।  

মেহেদী শিকদার বলেন, পুকুরের চারপাশে গরুর মুত্রের অভাব নেই, নিরুপায় হয়ে এই নষ্ট পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে।  

পাথরঘাটা পৌরসভা ১৩ বর্গকিলোমিটার ও এর আশপাশের এলাকার জনসাধারণের একমাত্র ভরসাস্থল রিজার্ভ পুকুরটি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় এবং অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে পুকুরের পার যাচ্ছে দখলদারদের দখলে। অযত্নের কারণে এ পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করতেও হিমশিম খাচ্ছে জনসাধারণ।

এদিকে বরগুনার পাথরঘাটায় খাবার পানির তীব্র সংকট থাকে সব সময়। শুষ্ক মৌসুম এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বেশিরভাগ পুকুর শুকিয়ে যায়। এক কলস পানি নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন তারপরও কাঙ্ক্ষিত পানি পেতে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে।

পাথরঘাটা পৌরসভার কয়েকটি পুকুরে সামান্য পানি থাকলেও খাবার ও রান্না করার জন্য পৌরবাসীদের ভরসা এই রিজার্ভ পুকুরটি। সারা বছরই এই রিজার্ভ পুকুরের পানির ওপর ভরসা করে থাকে পাথরঘাটা পৌরসভা আবাসিক এলাকাসহ বাণিজ্যিক এলাকা।  

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরাও সকাল হলেই মোটরসাইকেলে কলস, পানির বোতল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে পানি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। এছাড়াও রিকশা ভ্যানের মাধ্যমে পানি নেওয়ার জন্য মানুষ ভিড় করছেন। রিজার্ভ পুকুরের ফিল্টের পানি নিতে প্রতিদিনই দেখা যায় প্রতিযোগিতা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নে সরকারি-বেসরকারি মিলে বিকল্প পানির উৎস হিসেবে ৫৮৯টি পুকুরে বালুর ফিল্টার (পিএসএফ) বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে সচল আছে মাত্র ৯৬টি। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দেওয়া আরও ২০টির মতো ফিল্টার সচল আছে। বাকি ফিল্টারগুলো অকেজো হয়ে গেছে। এছাড়াও এ উপজেলায় পানির সমস্যা নিরসনে ৯০৩টি অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হলেও এর মধ্যে ৮২৮টিই অকেজো হয়ে আছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।