ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভূঞাপুরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ধীরগতি

সুমন রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
ভূঞাপুরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ধীরগতি

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। তিন বছর অতিবাহিত হলেও বর্তমানে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

 

এছাড়া প্রস্তাবিত ওই এলাকাকে উপজেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে যমুনা নদীর ওপর বাঁধ তৈরির কাজেরও চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই। ফলে ভূঞাপুরের এই চরাঞ্চলবাসীর মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে।

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের দাবি, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজের কিছুটা ধীরগতি হলেও বর্তমানে পূর্ণদমে কাজ চলছে।
জানা যায়, উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পলসিয়া, নলসিয়া, কোনাবাড়ি, দোভায়া, পাটিতাপাড়া এবং গোবিন্দাসী ইউনিয়নের গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া চরাঞ্চলের ৫০২.০২ একর খাস জমিতে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা ২০১৯ সালের ২৮ জুন (শুক্রবার) দুপুরে পরিদর্শন করেন তৎকালীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির, তৎকালীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক ও যুগ্ম সচিব (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. মনিরুজ্জামান, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

এরপর দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও এই প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমে তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ভূঞাপুরের যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরের ৫০২.০২ একর জমির এই প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের সড়ক, নদী ও রেলপথে সরাসরি যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র প্রস্তাবিত ভূঞাপুরের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলেই এই সুবিধা বিদ্যমান। ফলে এখানে উৎপাদিত পণ্য সারাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কম সময়ে ও কম খরচে পৌঁছানো সম্ভব।

এ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে উপজেলার পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের লোকসহ জেলার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা বাণিজ্যের। এতে যমুনার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে পূর্বপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি ও বসতভিটা। সুযোগ সৃষ্টি হবে পর্যটন শিল্পের।

ভূঞাপুর ইবরাহিম খাঁ সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ ইমন প্রামাণিক বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হলে সেখানে কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ যেন এই অঞ্চলের জন্য সংরক্ষিত থাকে তারও জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সেলিম সিকদার, মো. শামসুল হক, মো. জুলহাস শেখ, মমতা বেগম, মোছা. আমেলা বেগম বলেন, দীর্ঘ তিন বছর চলে গেলেও এই চরাঞ্চলে এখনো ইপিজেড স্থাপনের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এছাড়া তৎকালীন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বেশ কিছু ব্যক্তিগত জমিকে খাস জমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে বেশ কিছু জমির মালিকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই জমির প্রকৃত মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপন করা হোক। ইপিজেড স্থাপন হলে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য আমূল পরিবর্তন হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই এলাকায় দ্রুত ইপিজেড স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার জানান, ভূঞাপুরের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য যে ৫০২.০২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার সব খাস জমি নয়। এর মধ্যে কিছু জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তারপরও আমরা চাই ভূঞাপুরে দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হোক। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে এই এলাকার লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন জানান, উপজেলার নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় ৫০২.০২ একর জমিতে সেনাবাহিনীর একটি দল অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া ওই চরের সঙ্গে মূল ভূ-খণ্ডকে যুক্ত করতে যমুনা নদীতে একটি বাঁধ তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি টিম।

তিনি আরও জানান, আশা করি খুব দ্রুতই ভূঞাপুরের প্রস্তাবিত অর্থনীতি অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, ভূঞাপুরের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এই কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও বর্তমানে এই কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দল বর্তমানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনার ওই অংশে বাঁধ তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

তিনি আরও জানান, আশা করি খুব দ্রুতই ভূঞাপুর তথা টাঙ্গাইলবাসীর স্বপ্নের অর্থনৈতিক অঞ্চল তার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।